OrdinaryITPostAd

প্রাচীন নিদর্শন পিরামিডের রহস্য!!!

মিশরের অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হল পিরামিড। মিশরিওরা তাদের মৃত দেহকে মমি করে পিরামিডের অভ্যন্তরে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষিত রাখে। তাই অতি প্রাচীনকালের পিরামিডটি মিশরীয়দের সংস্কৃতির অংশ। পিরামিড এক প্রকার জ্যামিতি আকৃতির পাথর সন্নিবেশিত স্থাপত্য যার তলদেশ অনেকটা ত্রিভূজাকার যার কেন্দ্র একটি বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পিরামিড এর ভূমি যেকোনো আকৃতির বহুভূজ বা এর তলদেশ যেকোনো আকৃতির ত্রিভূজ হতে পারে। আমরা আজকের এই কনটেন্টের মাধ্যমে পিরামিডের জীবন বৈচিত্র ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেতে পারি।

প্রাচীন নিদর্শন পিরামিডের রহস্য!!!

প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। এককালে মিশর শাসন করত ফেরাউন সম্প্রদায়, যাদের শাসকদের বলা হত ফেরাউন। সে ফেরাউন রাজাদের মমি করে সমাধি করার জন্য পিরামিড নির্মাণ করত। তাদেরকে কবর বা সমাধী দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মান করা হতো। আমরা আজকের এই কন্টেন্টের শুরুতে মিশরীয় পিরামিডের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করবো। নিম্নে তাদের নাম ও আয়ুষ্কাল তুলে ধরা হলো। 

ক) খুফু'র পিরামিডঃ মিসরে বিভিন্ন আকৃতির আনুমানিক ৭৫টি পিরামিড রয়েছে। তন্মধ্যে সবচাইতে আকর্ষণীয় পিরামিড হচ্ছে খুফু'র পিরামিড। এটির সূত্রপাত প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা আনুমানিক ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপনকৃত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর। পিরামিডটি তৈরি করা হয় বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। এক একটি পাথর খন্ডের ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০-৪০ ফুটের মত। 
খ) সুষম পিরামিডঃ সুষম পিরামিড হল, যে পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভূজ এবং পাশের তলগুলো সব সমান ত্রিভুজ তাকে সুষম পিরামিড বলে।
গ) পিরামিডের ভূমিঃ যে বহুভূজের উপর পিরামিড অবস্থিত থাকে তাকে পিরামিডের ভূমি বলে।
ঘ) পিরামিড পার্শ্ব তলঃ পিরামিডের পার্শ্বতল হল, পিরামিডের ভূমি বাদে একটি বিন্দুতে মিলিত অন্যান্য ত্রিভূজাকার তলগুলোকে পিরামিডের পার্শ্বতল বলে।
) পিরামিড  ধারঃ পিরামিডের ধার হল, পিরামিডের দুইটি সন্নিহিত তলদেশ অর্থাৎ দুইটি পার্শ্বতল অথবা একটি পার্শ্বতল ও ভুমি যে রেখায় মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের ধার বলে থাকে। 
চ) পিরামিড  ধারঃ পিরামিডের শীর্ষবিন্দু ও ভূমির কোনো কৌণিক বিন্দুর সংযোগ সরল রেখাকে বলা হয় পিরামিডের ধার।
ছ) পিরামিড  শীর্ষবিন্দুঃ একটি পিরামিডের পার্শ্বতলগুলি একটি সাধারণ বিন্দুতে মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের শীর্ষবিন্দু বা ইংরেজিতে Vertex বলে।
জ) পিরামিড  উচ্চতাঃ সাধারণত পিরামিডের উচ্চতা বলতে, পিরামিডের শীর্ষ হতে ভূমির উপর অঙ্কিত লম্বকে বুঝায়।



চোঘা যানবিল এমন একটি প্রাচীন এলামাইট কমপ্লেক্স যা ইরান এর খুজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত।

মেসোপটেমিয়ার প্রথম পিরামিড সাদৃশ্যের স্থাপনা তৈরি করে। এদেরকে জিগুরাত নামে ডাকা হত। প্রাচীনকালে এদের উজ্জল সোনালি/তামাটে রঙ করা হত। স্থানীয় ধর্মের জন্য সুমেরইয়, বেবিলনইয়ান, এলামাইট, আক্কাদীয় ও আসিরিয়ানরাও জিগুরাত বানাত। জিগুরাতের পূর্বসুরী উত্তোলিত মাচা যা ৪ হাজার খ্রিস্টাব্দ পূর্বের উবাইদ আমল থেকে বিদ্যমান। প্রাচীন জিগুরাত নির্মাণ শুরু হয় প্রাথমিক সুমেরীয় সভ্যতার শেষের দিকে। 

বর্গাকার, ডিম্বাকার বা আয়তাকার ভিত্তির উপর তৈরি জিগুরাত ছিল একটি পিরামিড, যার চূড়া ছিল সমতল। জিগুরাত এর কেন্দ্র রোদে পোড়ানো ইটের তৈরি হত, এর সম্মুখভাগ ছিল আগুনে পোড়া ইট মোড়ানো। সম্মুখভাগে বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেয়া থাকত, যা জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গুরুত্ব বহন করত।  স্তরের সংখ্যা ২ থেকে ৭ এর মাঝে উঠা নামা করত। এটা ধরে নেওয়া হত যে, এদের চুড়ায় মন্দির বসানো থাকত। মন্দিরে প্রবেশ করার পথ জিগুরাতের এক পাশে সারি সারি সিঁড়ি অথবা চারদিক ঘেরা সর্পিল সিঁড়ি যা তলদেশ থেকে চূড়া অবধি থাকত। 

পৃথিবীর বিখ্যাত পিরামিডগুলো মিশরে অবস্থিত। এগুলো ইট বা পাথরের তৈরি বিশাল স্থাপনা, যার মাঝে কিছু বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থাপনা হিসেবে পরিগণিত। অতি প্রাচীনকালে মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে বা পুনর্জন্ম হয়।  ব্যক্তি গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে তাদের মমি করে রাখা হতো। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলে এ কাজে গুরুত্ব আরো বেশি বেড়ে যেতো। ফারাওরা ক্ষমতা পেলে প্রত্যেকে  চাইতো তাদের মৃত্যুর পর সমাধিস্থল হবে বিশাল আকৃতির। তাই অনেকেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সমাধিস্থল তৈরির কাজ চালিয়ে যেত। সমাধিস্থল গুলো ছিল আসলে মৃতের আত্মার ঘর বা মমি ঘর। মিশরীয় ফারাওরা মনে করত, লাশ বা মৃতদেহ টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করে আত্মার বেঁচে থাকা বা ফিরে আসা। তাই মৃতদেহকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে তারা মমি করতো। আত্মার বেঁচে থাকার জন্য মমি করার সময় মৃত ব্যক্তির সাথে তারা নিত্যব্যবহার্য জিনিস বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য ও বিপুল ধন-সম্পদ কবরস্থ করতো। আর সমাধিস্থল প্রধানের দায়িত্ব থাকতো দস্যুদের কবল থেকে মৃতদেহ আর তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষা করার। 

পিরামিড নিয়ে এক গবেষণায় উঠে আসে যে, পিরামিড এর মধ্যে এমন এমন কিছু রয়েছে যা খাবারকে দীর্ঘদিন সতেজ ও সংরক্ষিত রাখে ও স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটাও বলা হয়, পিরামিড তৈরি করার মধ্যেই এর রহস্য লুকিয়ে আছে। প্রতিটি পিরামিড চারদিকে একটি নির্দিষ্ট কোণে তৈরি। যার মান ৫১ ডিগ্রি। পিরামিড কসমিক এনার্জি বা মহাজাগতিক রশ্মি শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। তাই একটি পিরামিড এর মধ্যে রাখা খাদ্য বাইরের তুলনায় ২-৩ গুন বেশি সতেজ থাকে এবং খাদ্যের স্বাদ ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। বিল কেরেল নামের এক গবেষক পিরামিড এর উপর ১৭ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। তিনি পিরামিডের মধ্যে এক ধরনের সামুদ্রিক চিংড়ির উপর পরীক্ষা করে দেখেন যে, সাধারণত এই ধরনের সামুদ্রিক চিংড়ি ছয় থেকে সাত সপ্তাহ বাঁচে। কিন্তু পিরামিড এর মধ্যে এই চিংড়িগুলো এক বছরের বেশি সময় ধরে বেঁচে আছে। এছাড়াও তিনি লক্ষ্য করেন যে, এই চিংড়িগুলো তাদের স্বাভাবিক আকার এর চেয়ে তিনগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এবং তার সহকারীরা আবিষ্কার করেন যে, উচ্চ রক্তচাপজনিত ব্যাক্তিরা পিরামিড এর মধ্যে কিছুদিন থাকার পর তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। একটি কানাডিয়ান হসপিটালে একটি পিরামিডের প্রতিলিপি তৈরি করা হয় এবং তার মধ্যে রোগীদের রাখা হয়। তারা লক্ষ্য করলেন যে রোগীরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছে এবং ব্যথার নিরাময় অনেক দ্রুত হচ্ছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পিরামিড এর মধ্যে এ নেগেটিভ আয়ন তৈরি হয়। অনেক মানুষ দেখেছেন যে পিরামিড এর মধ্যে ঘুমানোর পর তাদের কম ঘুমের প্রয়োজন হচ্ছে এবং তারা অনেকখানি হালকা ও শান্তি অনুভব করছেন। পিরামিড আমাদের মস্তিষ্কের পিনিয়াল এবং পিটুইটারি গ্রন্থি সক্রিয় তা বাড়িয়ে দেয়। পিরামিড এর মধ্যে থাকাকালীন লোকজনেরা শারীরিক ভারসাম্য শান্তি এবং বিভিন্ন রকম উপকারিতা অনুভব করে থাকেন। এছাড়াও অল্প সময়ের জন্য হলেও যদি পিরামিড এর মধ্যে থাকা হয় তাহলে এটি মানুষের মাথা ব্যথা হ্রাস করে।

মিশরের হাজার বছরের অতি প্রাচীন সমাধির মধ্যে শস্যের বীজ খুঁজে পাওয়া গেছে। সেগুলো সম্পূর্ণভাবে অক্ষুন্ন ছিল। অথচ আধুনিক বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি শস্যের বীজ সাধারনত চার বছর পর্যন্ত ঠিক থাকে। পিরামিডের জৈব পদার্থ সংরক্ষণের অসাধারণ ক্ষমতা বিভিন্ন বইতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ১৯৩০ এর দশকে এন্টোনি বভিস নামের একজন ফরাসি বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেন যে, পিরামিডের মধ্যে কোনো মৃতদেহ পচে যায় না। মিশরের সাতকারা এলাকায় মিশরিয়রা এক আদিবাসী মহিলার কবর খনন করে, তারা সেখানে মাটির পাত্রে কিছু খাদ্য খুঁজে পান। যেমন মাছ-মাংস, রুটি ফলমূল ইত্যাদি।

প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে পৃথিবীর অতি প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড এর রহস্য সম্পর্কে আমরা আজকের এই কন্টেন্টের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ধারণা পেলাম। কনটেন্টের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪