OrdinaryITPostAd

টনিক কী ? টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফল চেনার উপায়

২১ শতাব্দীতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফলজ, বনজ বৃক্ষে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে পৃথিবীর নানান দেশে নানান কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও বাংলাদেশও তেমন একটা পিছিয়ে নেই। তারই ধারাবাহিকতায় ড্রাগন ফলের দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধিতে টনিক এর ব্যবহার এটি একটি যুগান্তকারী কৌশল। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে টনিক কি? টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফল চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
পোস্টসূচিপত্রঃ

টনিক কী ?

দ্রুততম সময়ে ড্রাগন ফলের ফলন বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে টনিক ব্যবহার কৃষকের একটি অত্যাধুনিক কৌশল। টনিক এক জাতীয় হরমোন যা ড্রাগন গাছে প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বেশী সংখ্যক ড্রাগন ফল উৎপাদন করা সম্ভব। গাছ ও ফলের বৃদ্ধি তরান্বিত করতে বিভিন্ন ধরণের হরমোন রয়েছে। ড্রাগন ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে টনিক ব্যবহার করা হয় সেটি জিএ৩ বা জিবারেলিক এসিড থ্রি নামে পরিচিত। এটি মূলত এক ধরণের হরমোন যা টনিক নামেই ভারত থেকে বাংলাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। মূলত এটি গ্রোথ হরমোন নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। 

টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফল চেনার উপায়

ড্রাগন ফল সুস্বাদু হলেও কেনার আগে আপনাকে বেছে নিতে হবে কোনটি প্রাকৃতিক টনিকমুক্ত আর কোনটি টনিক ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত ড্রাগন ফল সেটি চেনার কিছু উপায় জেনে রাখা উচিত নিম্নে টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফল চেনার উপায় সম্পর্কে কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলোঃ-
  • আকার ও ওজনের তারতম্যঃ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ড্রাগন ফল সাধারণত ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়ে থাকে। আর টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। টনিক ব্যবহারের ফলে উৎপাদিত ফলের বাহ্যিক আকার উদ্ভট আকৃতির হয়ে থাকে। 
  • রংয়ের ভিন্নতাঃ ড্রাগন ফলের রং শুধুমাত্র পার্পেল বা লাল রঙের হয় না। পার্পেল বা লাল রঙের সাথে সবুজ রঙের মিশ্রণ থাকে। আবার একক রঙের হওয়া পর্যন্ত গাছে রাখা হলে সেটি আবার পঁচে গিয়ে থাকে। আর যদি চার-পাঁচদিনের মধ্যে ড্রাগন ফল বিক্রি না হয় তবে পুরোটাই হলুদ আকৃতির হয়ে থাকে। 
  • স্বাদের ভিন্নতাঃ অন্যদিকে টনিক দ্বারা উৎপাদিত ড্রাগন ফল মিষ্টি না হয়ে অনেকটা পানসে প্রকৃতির হয়। টনিক দ্বারা উৎপাদিত ড্রাগন ফল প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের চাইতে স্বাদে ও গুনে বেশ ভিন্ন হয়।
  • দ্রুত গ্রোথ বৃদ্ধিঃ রীতিমত টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফলের গ্রোথ খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যার কারণে, ড্রাগন ফলের বাহ্যিক আকৃতি স্বাভাবিকভাবেই ভিন্নতর হয়। টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফলের খুব দ্রুতই গ্রোথ বৃদ্ধি হওয়ার দরুন পরিমিত পুষ্টি উপাদান তৈরি না হওয়ার কারণে সেগুলো তুলে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতা। কারণ সেগুলো বেশি দিন থাকলে ওজন অনেক বেড়ে যায়।

টনিক দ্বারা উৎপাদিত ড্রাগন ফলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

বর্তমান সমসাময়িক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমনকি মিডিয়াতেও ড্রাগন ফলে টনিক ব্যবহারকে কেন্দ্র করে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে তা ব্যাপকভাবে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। টনিক ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দরুন ড্রাগন ফলের আসল পুষ্টিগুণ অনেকাঙ্কশে হারিয়ে যায়। কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত ড্রাগন ফল হয় পানসে। বর্ণভেদে বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে যার কারণে ড্রাগন ফলের প্রকৃত সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ড্রাগন ফল খাওয়ার দরুন  আমাদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। ড্রাগন ফল চাষে কি সত্যিই টনিক ব্যবহৃত হচ্ছে? আর ব্যবহৃত হলে এসব ড্রাগন ফল খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা কতটুকু চলুন সে সম্পর্কে আলোচনা করি।
সম্প্রতি বাউবি থেকে ড্রাগন ফল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের যে চারা প্রদান করা হয়, তা থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে ড্রাগন ফল উৎপাদনের পরামর্শ দেয়া হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের আবরণটা  উজ্জ্বল হয়। আর যদি টনিক দ্বারা ড্রাগন ফল উৎপাদন করা হয় তাহলে ক্রেতা তার কেনার আগ্রহ  হারিয়ে ফেলে। যার ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে দিন দিন ভাটা পরে। 

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. মোক্তার হোসেন এক প্রতিবেদনে জানান, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত যেকোন পণ্যেরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন রাসায়নিক নিরাপদ উপায়ে ব্যবহারের মাত্রা ঠিক করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি মানা হয় না। বেশি পরিমাণে হরমোন বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে, এই হরমোন ব্যবহারের কোন সহনীয় মাত্রা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হরমোন ব্যবহারেরই কোন অনুমোদন বাংলাদেশে নেই।

ড্রাগন ফলের নানান প্রজাতি ও উৎভাবন প্রক্রিয়া

গত কয়েক বছর যাবৎ ড্রাগন ফল দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর বিদেশি এই ফলটি এখন বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রাগন ফলের আলাদা চারটি প্রজাতিও উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো হচ্ছে বারি-১ যা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ ও জার্মপ্লাজম সেন্টার মিলিতভাবে তিন প্রজাতির ড্রাগন ফল উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে বাউ ড্রাগন-১, বাউ ড্রাগন-২ এবং বাউ ড্রাগন-৩। বাউ ড্রাগন প্রজাতিটি উদ্ভাবনের সাথে জড়িত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ড. মো. মোক্তার হোসেন। দেশীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দামের দিক থেকেও সহজলব্য হয়ে উঠেছে এক সময়ের দামী এই ফলটি।

বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে মিঃ মুন্না বলেন, একবার ড্রাগন ফলের বাগান করলে এবং সেটি  যদি সঠিকভাবে চাষাবাদ করা হয় তাহলে প্রায় এক শতাব্দী ধরে এর ফল পাওয়া সম্ভব। বড় ড্রাগন ফলের চাইতে ছোট ড্রাগন ফলে ভাল দাম পাওয়া যায় বলেও জানান মিঃ মুন্না। তিনি বলেন, ড্রাগন ফলে যে টনিক ব্যবহার হয় সেটি সম্ভবত ভারত থেকে আসে। বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা, কালীগঞ্জ জেলার দিকে ড্রাগন ফলে এই টনিক বেশি ব্যবহৃত হয়। তিনি আরও জানান, ড্রাগন গাছের যে ডালটা পুরাতন হয়ে যাবে ওই ডালটা কেটে দিলে উপর দিয়ে নতুন ডাল বের হয়। এভাবে রি-শাফল করে যদি কেউ কাটে সেক্ষেত্রে গাছ যতদিন ইচ্ছা ততদিন রাখতে পারবেন। জুনের পর থেকে বছরের বাকি সময়ে ড্রাগন ফলের বেশ ভাল দাম পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. উবায়দুল্লাহ কায়ছার বলেন, সম্প্রতি ড্রাগন চাষে এই টনিক ব্যবহারের বিষয়টি জানতে পেরেছেন তারা। সীমান্ত এলাকার কিছু কৃষক এই টনিক ব্যবহার করছেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে ড্রাগন ফলে যে টনিক ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। এগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

নাটোর ড্রাগন ফ্রুটস এর পরিচালক মনিরুজ্জামান মুন্না জানান, বছরে প্রায় ৫০-৬০ টনের মতো ড্রাগন ফল উৎপাদন করে থাকেন তিনি। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে ইউটিউব দেখে ড্রাগন ফল গাছের চারা সংগ্রহ করে নাটোরে বাগান গড়ে তোলেন এই উদ্যোক্তা।

প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ড্রাগন ফলে ব্যবহৃত টনিক কি? টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফল চেনার উপায়, টনিক দ্বারা উৎপাদিত ড্রাগন ফলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, টনিক ব্যবহৃত ড্রাগন ফল চেনার উপায় সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ অবধি আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পরবর্তীতে আবারো অন্য কোন কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আজকের মতো বিদায় নিলাম। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪