গ্রীষ্মকালে তাপদাহে শিশুদের ডায়েরিয়া হলে করণীয় কি ? জানুন!!!
আমরা জানি গ্রীষ্মকাল হলো গরমকাল। এই গরমকাল এলেই বিভিন্ন বয়সী বাচ্চারা ডায়েরিয়া সহ ভাইরাসজনিত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়। গরমের তীব্রতা যখন বেড়ে যায় তখন আমরা ঘরের বাহিরে থাকা অবস্থায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে একটু প্রশান্তির জন্য ঠান্ডা জাতীয় পানীয় অথবা খোলাপানি পান করে থাকি। আবার কখনো কখনো দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা খোলা খাবারও আমরা জীবিকার তাগিদে কোনো প্রকার চিন্তা ছাড়াই পেটের ক্ষুদা নিবারণের তাগিদে খেয়ে ফেলি। যার দরুণ আমাদের কোমলমতি শিশুরা পানিবাহিত রোগ সহ বিভিন্ন প্রকার ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপদাহে শিশুদের ডায়েরিয়া হলে করণীয় কি ? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
গ্রীষ্মকালে তাপদাহে শিশুদের ডায়েরিয়া হলে করণীয় কি ? জানুন!!!
ডায়েরিয়া হলো এক প্রকার পানিবাহিত রোগ। এক জরিপে দেখা যায়, প্রত্যেক বছর আনুমানিক পাঁচ লক্ষাদিকেরও বেশি শিশু ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পাঁচ বছরের কম বয়স্ক শিশুর মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো এই ডায়েরিয়া। চলুন জেনে নেই, গ্রীষ্মকালে ডায়েরিয়া হওয়ার কারণ এবং এ থেকে প্রতিকারের উপায় কি।
ডায়েরিয়া হওয়ার কারণঃ
আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে ডায়েরিয়া হয়ে থাকে। দিনে ৩ বার বা তার চেয়ে বেশি পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়েরিয়া বলে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া তীব্র হলে চাল ধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা নির্গত হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মকালে ডায়েরিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হলো দূষিত পানি। আর এই দূষিত পানি থেকেই ছড়ায় ভাইরাসজনিত বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়েরিয়া হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। রোটা ভাইরাস, কখনো কখনো ইকোলাই ব্যাকটেরিয়াতেও আক্রান্ত হতে দেখা যায়। শহর অঞ্চলে ট্যাপের পানি অনেক সময় সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে এলে দূষিত হয় এবং ডায়েরিয়া রোগের কারণ হিসাবে বিস্তার লাভ করে। পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্নভাবে খাদ্য সংরক্ষণ, প্রায় সময় দুর্গন্ধযুক্ত বাসি খাবার খাওয়া ডায়েরিয়ার অন্যতম কারণ। ফুটপাতের পাশে যে সকল উন্মুক্ত খাবার বিক্রয় হয় তীব্র গরমের কারণে অনেক সময় সেগুলোও খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এই সকল খাবার ডায়েরিয়া রোগের কারণও হতে পারে।
প্রতিকারের উপায়ঃ
ক) ডায়েরিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে অনেককেই মেট্রোনিডাজল বা জিংক জাতীয় ঔষধ খেতে দেখা যায়। ডায়েরিয়া বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই সেই ওষুধ খাওয়া ইচ্ছেমতো বন্ধ করে দেন। এটি কখনোই করবেন না। প্রকৃতপক্ষে এইগুলো ডায়েরিয়া থামানোর ঔষধ নয়। এগুলো হলো অ্যান্টিবায়োটিক। কোনো কারণে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে ডোজ সঠিকভাবে শেষ করতে হয়। যদি তা শুরু করেন তাহলে একটি ট্যাবলেট প্রতিদিন আট ঘণ্টা অন্তর অন্তর সেবন করতে হবে।
খ) সাধারণ ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হলে শরীরে দ্রুত পানিশূন্যতা ও লবনের ঘাটতি দেখা দেয়। এ দুটোকে রোধ করাই ডায়েরিয়ার মূল চিকিৎসা। প্রতিবার পাতলা পায়খানা হলে বয়স অনুযায়ী খাবার স্যালাইন নিম্নোক্ত হারে পরিমাণ মতো পান করা উচিত।
- ০ থেকে ২ বছর : ১০-২০ চা চামচ (৫০-১০০ মি.লি.)
- ২ থেকে ১০ বছর : ২০-৪০ চা চামচ (১০০-২০০ মি.লি.)
এছাড়া ডায়েরিয়া হলে খাবার স্যালাইন ব্যতীত তরল খাবার যেমন- ভাতের মাড়, চিড়া পানি, তাজা ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবারও চালিয়ে যেতে হবে। আবার বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধও খেতে পারবে। কিন্তু যদি পাতলা পায়খানার সাথে অনবরত রক্ত যেতে থাকে, জ্বর সহ প্রচন্ড পেটব্যথা হয়, পিচ্ছিল জাতীয় মল, মলত্যাগে ব্যথা অনুভব ইত্যাদি জটিল অবস্থা সৃষ্টি হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
গ) ডায়েরিয়া প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। শিশুদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত নখ কাটাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করলে আমরা ডায়েরিয়া নামক মহামারী থেকে নিস্তার পেতে পারি।
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে তাপদাহে শিশুদের ডায়েরিয়া হলে কি করণীয় এবং এটির প্রতিকারের কি উপায় সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত ধারণা পেলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url