OrdinaryITPostAd

ডায়াবেটিসের উপসর্গ নিয়ে কিছু কথা

ডায়াবেটিস হলে আমরা প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই হতাশ হয়ে যাই। কিন্তু এটি কখনই করা ঠিক হবে না। পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগের এখনও পর্যন্ত কোন প্রতিষেদক আবিষ্কার করা না গেলেও আপনি একটু সচেতন হলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি ঐ সকল পাঠকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে যারা মূলত ডায়াবেটিস স্বাস্থ্য সচেতন। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা ডায়াবেটিস উপসর্গ নিয়ে কিছু কথা বলবো।  
পোস্ট সূচিপত্রঃ ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা দেহের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। এটি মূলত দুই ধরনের হয়—টাইপ ১ এবং টাইপ ২। উভয় ক্ষেত্রেই শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বা ব্যবহারের ক্ষমতা ব্যাহত হয়, যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। কেও যদি ডায়াবেটিস রোগটিকে নিয়ে অবহেলা করেন তাহলে একসময় অনিয়মতান্ত্রিক ডায়াবেটিস এর জন্য আপনার অকাল মৃত্যু হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যার কারণে আমাদেরকে সর্বদাই ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতন থাকাটা একান্ত জরুরি। ডায়াবেটিস যেকোনো বয়সেই হতে পারে। এর কোন ধরা বাঁধা নেই। তবে, এই রোগ হওয়ার আগে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয় যা অনেকেরই অজানা। নিম্নে ডায়াবেটিসের উপসর্গ নিয়ে কিছু কথা আপনাদের জন্য উল্লেখ করলাম যা আপনাকে সচেতন হতে উদ্ধত করবে।

ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গ

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ লক্ষণ দেখা যায় না, তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে, যা রোগীকে সচেতন করে তুলতে পারে।

১। অতিরিক্ত পিপাসা ও বারবার প্রস্রাব

ডায়াবেটিস হলে শরীরে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতির কারণে কিডনি তা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, ফলে বারবার প্রস্রাব হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এর ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, যা পিপাসা বাড়িয়ে তোলে।

২। অতিরিক্ত ঘুম বা ঘুমজনিত সমস্যা

ডায়াবেটিস শরীরের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, ফলে অনেক রোগী অতিরিক্ত ঘুমান বা সবসময় ক্লান্ত অনুভব করেন। আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে, যা রক্তে শর্করার মাত্রার পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত।

৩। অতিরিক্ত ক্ষুধা

ইনসুলিনের অভাবের কারণে শরীর খাবারের শর্করা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না, ফলে কোষগুলোর শক্তির ঘাটতি দেখা দেয় এবং রোগী অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব করে।

৪। ওজন হ্রাস

শরীর যখন শর্করার পর্যাপ্ত ব্যবহার করতে পারে না, তখন শক্তির উৎস হিসেবে পেশি ও চর্বি ব্যবহার করতে শুরু করে, ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন কমে যায়।

৫। ত্বকের পরিবর্তন ও সংক্রমণ

ডায়াবেটিস থাকলে ত্বক অনেক সময় শুষ্ক হয়ে যায় এবং সহজেই ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে, ঘাড়, বগল, বা কুঁচকিতে কালো দাগ দেখা দিতে পারে, যা 'অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকান্স' নামে পরিচিত। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম পূর্ব লক্ষণ।

৬। ক্লান্তি ও দুর্বলতা

শর্করা কোষে পৌঁছাতে না পারলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, যার ফলে রোগী সবসময় ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব করে।

৭। চোখের অতিরিক্ত শুষ্কতা বা প্রদাহ

ডায়াবেটিসের কারণে চোখের তরলের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে, লালচে দেখায়, বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।

৮। ঘা শুকাতে দেরি হওয়া ও ত্বকের সমস্যা

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ছোটোখাটো ক্ষত বা কাটা-ছেঁড়া দ্রুত ভালো হয় না। এছাড়া, ইনসুলিনের ঘাটতির ফলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে, যা ত্বকের সংক্রমণ বা শুষ্কতার কারণ হতে পারে।

৯। মুড পরিবর্তন ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

রক্তে শর্করার মাত্রার পরিবর্তন সরাসরি মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু রোগী উদ্বেগ, হতাশা, বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হন।

১০। ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি

রক্তে অতিরিক্ত শর্করা চোখের ভেতরের তরল ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে অস্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে।

১১। পেটে সমস্যা ও হজমজনিত জটিলতা

ডায়াবেটিস হলে গ্যাস্ট্রোপারেসিস নামে একটি সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেখানে পাকস্থলী খাদ্য ঠিকভাবে হজম করতে পারে না। ফলে পেটে গ্যাস, বমি বমি ভাব, বা খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে।

১২। হাত-পা অবশ হওয়া বা জ্বালা করা অনুভব

ডায়াবেটিস স্নায়ুতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে হাত-পায়ে অবশ ভাব, ঝিনঝিন বা জ্বালা করার অনুভূতি দেখা দিতে পারে।

১৩। নিড়ানি ও যৌন স্বাস্থ্য সমস্যা

ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ু ও রক্তনালীতে ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে যৌন দুর্বলতা বা নিড়ানি দেখা যায়।

উপসর্গ প্রকাশের ধরন ও বিভিন্নতা

ডায়াবেটিসের উপসর্গ রোগীর শারীরিক অবস্থা, বয়স, জীবনযাত্রার ধরন এবং রোগের প্রকারভেদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত হঠাৎ করে দেখা দেয় এবং উপসর্গ দ্রুত প্রকট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, ফলে অনেক রোগী বেশ কিছুদিন ধরে উপসর্গগুলো উপেক্ষা করেন।

উপসর্গ মোকাবিলার উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পদক্ষেপ হলো-

  • পুষ্টিকর ও পরিমিত খাবার গ্রহণ
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা
  • ভালো ঘুম নিশ্চিত করা
  • চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা

সতর্কতা ও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ

যদি কেউ উপরের উপসর্গগুলোর একাধিক লক্ষণ অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্তের শর্করার পরীক্ষা, জীবনধারা পরিবর্তন এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

উপসংহার

নিশ্চয়ই! ডায়াবেটিসের উপসর্গগুলো নানা উপায়ে প্রকাশ পায়, এবং কখনো কখনো রোগী তা সহজেই বুঝতে পারেন না। আগে আমরা বেশ কিছু সাধারণ উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে, যা অনেক সময় উপেক্ষিত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪