OrdinaryITPostAd

ব্লাস্ট রোগ কি ? তা জানুন!!!

ধানের ছত্রাকজনিত রোগ হচ্ছে ব্লাস্ট রোগ। এই রোগের দরুন ধান চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হতে হয়। তাই ব্লাস্ট রোগ কি? কি তার পরিচয়? এ থেকে পরিত্রাণের উপায় এবং আমাদের কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা আমরা আজকের এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে বিশদ ধারণা পেতে পারি।


'' ব্লাস্ট রোগ কি ? তা জানুন!!! ''


বোরো ধান বা বাসন্তিক ধান বাংলাদেশের ধানের একটি জাত। এটি শীতকালীন ধান ও রবিশস্য। উৎপাদনের সময়ের উপর নির্ভর করে ধানের প্রধান যে তিনটি শ্রেণিভেদ করা হয়, বোরো ধান তাদের মধ্যে অন্যতম। বোরোর মৌসুম শুরু হয় আমনের মৌসুম শেষ হবার পর। ধান রোপণ শুরু হয় কার্তিক মাস থেকে অর্থাৎ অক্টোবর, নভেম্বর মাসে। ধান কাটা চলে বাংলা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ অর্থাৎ এপ্রিল জুন মাস পর্যন্ত। হেমন্তকালের শুরু থেকে গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই ধানের সময় চলে। এই ধানের মূল ফলন বসন্তকালে হওয়ায় একে বাসন্তিক ধান বলেও ডাকা হয়ে থাকে। ভারতে বোরো ধানকে বৈশাখী ধান নামেও ডাকা হয়ে থাকে। বোরো ধান জন্মানোর সময় সাধারণত বৃষ্টিপাত কম হয়ে থাকে। এই ধান সেচের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই এই ধানকে সঠিক ভাবে যত্ন নিতে আমাদেরকে কিছু পরিকল্পনামাফিক চাষাবাদের প্রতি মনোযোগি হওয়া উচিত। 

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বোরো ধানের প্রজাতিতে ছত্রাক জনিত ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ এই রোগের উৎপত্তিস্থল। এ জাতের ধান চাষ ব্যাপক হারে চাষের দরুন রোগটি ধানের বহুমাত্রিক রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কৃষক ভাইয়েরা বাজার থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রতিষেধক কিনে ধানের উপরে প্রয়োগ করছেন, কিন্তু কোন আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র গরমের দাপ্রদায়ের কারণে ধানক্ষেতের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, প্রচুর পরিমাণে গভীর নলকূপের পানি তুলে জমিতে দিলেও তেমন লাভ হচ্ছে না।অনুকূল পরিবেশ না থাকার কারণে এই রোগটি ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে। তাই আমাদের ব্লাস্ট রোগ চেনার উপায় ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা উচিত।


ব্লাস্ট রোগ কিভাবে চিনবেন?

ব্লাস্ট রোগ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। চারা গাছ থেকে ধান পাকা পর্যন্ত যেকোনো সময় এই রোগ দেখা দিতে পারে। এটি ধানের পাতা, গীট ও নেক বা শীষে আক্রমণ করে থাকে। তাই এদেরকে পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট রোগ বলা হয়ে থাকে।         

পাতা ব্লাস্টঃ- প্রথমে আক্রান্ত পাতায় ছোট ছোট বাদামী দাগ দেখা দেয়। পরে আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয়, মাঝখানটা ধূসর বা সাদা ও কিনারা মাদারী রং ধারণ করে। দাগগুলো অনেকটা লম্বাটে আকৃতির হয় এবং দেখতে অনেকটা চোখের মত। একাধিক দাগ মিশে শেষ পর্যন্ত পুরো পাতাটি শুকিয়ে মারা যায়।

গিট ব্লাস্টঃ- গিট ব্লাস্ট আক্রান্ত হলে আক্রান্ত স্থান সাধারণত কালো ও দুর্বল প্রকৃতির হয়। প্রবল বাতাসে আক্রান্ত স্থান ভেঙ্গে যেতে পারে, তবে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায় না।

নেক বা শীষ ব্লাস্টঃ- শিশির বা গুড়ি বৃষ্টির সময় ধানের ডিগ পাতা ও শীষের গোড়ায় সংযোগস্থানে পানি জমে। ফলে উক্ত স্থানে ব্লাস্ট রোগের জীবাণু আক্রমণ করে কালচে বাদামী দাগ তৈরি করে। পরবর্তীতে আক্রান্ত শিশিরের গোড়া পচে যাওয়ায় গাছের খাবার শিষে যেতে পারে, ফলে শীষ শুকিয়ে দানাচিটা হয়ে যায়। দেরিতে আক্রান্ত শীষ ভেঙে যেতে পারে। শীষের গোড়া ছাড়াও যে কোন স্থানে এ রোগ আক্রমণ করতে পারে।


ব্লাস্ট রোগ নিরাময়ের উপায়

রোগ আক্রমণ হওয়ার পূর্বে করণীয়ঃ- এই রোগ থেকে প্রতিকার পেতে প্রথমে, জমিতে জৈব সার প্রকারভেদে বিঘা প্রতি ৫০০-৮০০ কেজি এবং রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। যেমন-দীর্ঘ মিয়াদি জাতের জন্য বিঘা প্রতি ইউরিয়া, ডিএপি/টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও দস্তা যথাক্রমে-৪০, ১৩, ২২, ১৫ ও ১.৫ কেজি, স্বল্প মেয়াদী জাতের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৩৫,১২, ২০, ১৫ ও ১.৫ কেজি হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে, ডিএপি সার প্রয়োগ করলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া কম লাগে। পটাস সার সমান দুই ভাগে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম ভাগ জমি তৈরির সময়, এবং দ্বিতীয় ভাগ শেষ কিস্তি ইউরিয়া সার উপরী প্রয়োগের সময়। দ্বিতীয়ত সুস্থ ও রোগ মুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। যে সমস্ত জমির ধান নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়নি সেসব ধানের জমিতে রোগ হোক বা না হোক শীষ বের হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে ৫ গ্রাম ট্রফার ৭৫ ডব্লিউপি/দিপা ৭৫ ডব্লিউপি, অথবা ৬ গ্রাম নেটিভো ৭৫ ডব্লিউজি মিশিয়ে শেষ বিকেলে ৫-৭ দিন অন্তত দুইবার স্প্রে করতে হবে।

রোগ আক্রমণ হওয়ার পরবর্তী করণীয়ঃ- এ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কৃষি জমিতে ১-২ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে পারলে এ রোগের ব্যাপকতা থেকে অনেকখানি হ্রাস পাওয়া যায়। এ রোগ দেখা দিলে বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি ৫ শতাংশ ৮ গ্রাম ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি/দিপা ৭৫ ডব্লিউপি, অথবা ৬ গ্রাম নেটিভো ৭৫ ডব্লিউজি, অথবা ট্রাইসাইক্লাজল/Stubin গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে শেষ বিকেলে পাঁচ সাত দিন অন্তত দুবার স্প্রে করতে হবে।


প্রিয় পাঠক, আমরা আজকে এই কনটেন্টের মাধ্যমে ধানে ব্লাস্ট রোগ কি ? কি তার পরিচয় ? কি কি কারণে ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়, ব্লাস্ট রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। আজকের এই কনটেন্টের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪