হাটে কুরবানির পশু নির্বাচনের সহজ পদ্ধতি কি
কুরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা পশু মোটাতাজা করতে নিষিদ্ধ ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। দ্রুত কুরবানির হাটে পশু বিক্রয়ের লক্ষ্যে এমন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে থাকে তারা। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে হাটে কুরবানির পশু নির্বাচনের সহজ পদ্ধতি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ একজন মোসলমানের জন্য ঈদ-উল-আজহায় কুরবানি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। আপনার কুরবানি যদি সরিহাভিত্তিক না হয়, অর্থাৎ সহিশুদ্ধভাবে কুরবানির পশুটি ক্রয়ে আপনি যদি ব্যর্থ হন তবে শুধু আপনার পরিশ্রমই জলে যাবে না, আপনার কুরবানিও সঠিকভাবে হবে কি-না সন্ধেহ থেকে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে কোরবানির পশু ক্রয়ে সচেতন থাকতে হবে।
কুরবানির পশু নির্বাচনের সহজ পদ্ধতি:
- শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ: সুস্থ পশুর চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির হয়। এটি সব সময় জাবর কাটে এবং বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
- চামড়ার পরীক্ষা: পশুর গায়ে হাত দিলে চামড়াতে কাঁপুনি দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে লেজ নাড়াবে। অসুস্থ পশুর গায়ে চাপ দিলে মাংস দেবে যায় এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগে।
- খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা: সুস্থ পশু খাবার ধরলে সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয়। অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না।
- শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ: ট্যাবলেট খাওয়ানো পশুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে এবং প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।
- বয়স নির্ধারণ: গরুর ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই বছর বয়স হতে হবে। দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায়—দুই বছর বয়সী গরুর দুটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিসের উপসর্গ নিয়ে কিছু কথা
কুরবানির পশু কেনার সময় সতর্কতা:
- দিনের আলোতে পশু কিনুন: রাতের বেলায় পশু রোগাক্রান্ত নাকি সুস্থ তা ভালোভাবে বোঝা যায় না।
- দেশি গরু কেনার চেষ্টা করুন: বড় সাইজের গরুগুলোকে ইনজেকশন বা হরমোন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় বেশি, তাই মাঝারি ধরনের গরু কেনা নিরাপদ।
- বিক্রেতার কাছ থেকে পশুর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানুন: পশু কেনার পর সেটি স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করছে কি না তা নিশ্চিত করুন।
কুরবানির পশু নির্বাচনের আরও কিছু বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে যা আপনাকে সুস্থ ও উপযুক্ত পশু কিনতে সাহায্য করবে_
বিশেষ পদ্ধতি:
- দাঁতের পরীক্ষা: গরুর ক্ষেত্রে দুই বছর বয়স হলে দুটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে। ছাগল বা ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছর বয়স হলে দাঁতের গঠন পরিবর্তিত হয়।
- পায়ের গঠন: সুস্থ পশুর পা শক্ত ও সোজা থাকে। যদি পশু ল্যাংড়া হয় বা হাঁটতে সমস্যা হয়, তাহলে সেটি কুরবানির জন্য অনুপযুক্ত।
- চোখের অবস্থা: সুস্থ পশুর চোখ উজ্জ্বল ও স্বাভাবিক থাকে। যদি চোখে অন্ধত্ব বা অতিরিক্ত পানি দেখা যায়, তাহলে সেটি অসুস্থ হতে পারে।
- লেজ ও কান: পশুর লেজ ও কান সম্পূর্ণ থাকতে হবে। যদি লেজ বা কান অর্ধেকের বেশি কাটা থাকে, তাহলে সেটি কুরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
- শারীরিক গঠন: পশু অত্যন্ত দুর্বল বা কঙ্কালসার হলে সেটি কুরবানির জন্য অনুপযুক্ত। সুস্থ পশুর শরীর মাংসল ও শক্তিশালী হয়।
- চামড়ার পরীক্ষা: পশুর গায়ে হাত দিলে যদি চামড়া স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সেটি সুস্থ। অসুস্থ পশুর চামড়া শুষ্ক ও নির্জীব দেখায়।
- খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা: সুস্থ পশু খাবার ধরলে সঙ্গে সঙ্গে খেতে শুরু করে। যদি পশু খাবার গ্রহণে অনীহা দেখায়, তাহলে সেটি অসুস্থ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ চোখের যত্নে ৫টি কার্যকরী টিপস
ইসলামি নির্দেশনা:
হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, কুরবানির জন্য উপযুক্ত পশুর বয়স ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যেমন_
- ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সী দুম্বা দেখতে এক বছরের মতো হয়, তাহলে সেটি কুরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য।
- গরুর বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে।
- উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে।
কুরবানির জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত পশু হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, কুরবানির পশু অবশ্যই সুস্থ, সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট হতে হবে।
কুরবানির জন্য উপযুক্ত পশুর বৈশিষ্ট্য:
ক) বয়স:
- উট: কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়স হতে হবে।
- গরু ও মহিষ: কমপক্ষে দুই বছর বয়স হতে হবে।
- ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা: কমপক্ষে এক বছর বয়স হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সী দুম্বা দেখতে এক বছরের মতো হয়, তাহলে সেটি কুরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য।
খ) শারীরিক অবস্থা:
- পশু কানা, খোঁড়া, রোগাক্রান্ত বা দুর্বল হলে কুরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
- শিং, কান, লেজ ও দাঁত সম্পূর্ণ থাকতে হবে।
- পশুর গায়ে কোনো গুরুতর ক্ষত থাকা উচিত নয়।
গ) খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা:
- সুস্থ পশু খাবার ধরলে সঙ্গে সঙ্গে খেতে শুরু করে।
- অসুস্থ পশু খাবার গ্রহণে অনীহা দেখায়।
ঘ) চামড়ার পরীক্ষা:
- পশুর গায়ে হাত দিলে যদি চামড়া স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সেটি সুস্থ।
- অসুস্থ পশুর চামড়া শুষ্ক ও নির্জীব দেখায়।
ঙ) কুরবানির জন্য নিষিদ্ধ পশু:
- অন্ধ, খোঁড়া বা গুরুতর অসুস্থ পশু।
- যে পশুর হাঁড়ে মজ্জা নেই বা অত্যন্ত দুর্বল।
- যে পশুর শিং, কান বা লেজ অর্ধেকের বেশি কাটা।
- যে পশু জন্মগতভাবে বিকৃত বা অস্বাভাবিক।
কুরবানির পশু নির্বাচনের সময় আমাদের মধ্যে অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন, যা পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল তুলে ধরা হলো:
আরও পড়ুনঃ তীব্র গরমে শরীর শীতল রাখার ৩ উপায়
সাধারণ ভুলসমূহ:
- বয়স না দেখে পশু কেনা: অনেকেই পশুর বয়স যাচাই না করেই কিনে ফেলেন, যা ইসলামী বিধান অনুযায়ী কুরবানির জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
- শারীরিক ত্রুটি পরীক্ষা না করা: কুরবানির জন্য পশু অন্ধ, খোঁড়া, গুরুতর অসুস্থ বা অত্যন্ত দুর্বল হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
- ইনজেকশন বা রাসায়নিক প্রয়োগ করা পশু কেনা: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পশুকে দ্রুত মোটা করার জন্য নিষিদ্ধ ইনজেকশন ব্যবহার করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- খাবার গ্রহণের প্রবণতা পরীক্ষা না করা: সুস্থ পশু খাবার ধরলে সঙ্গে সঙ্গে খেতে শুরু করে। অসুস্থ পশু খাবার গ্রহণে অনীহা দেখায়।
- বাজারের ভিড়ে তাড়াহুড়ো করে পশু কেনা: অনেকেই শেষ মুহূর্তে বাজারে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে পশু কিনে ফেলেন, ফলে ভালোভাবে পরীক্ষা করার সুযোগ পান না।
- শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করা: অনেকেই বড় ও মোটা পশু দেখে কিনে ফেলেন, কিন্তু সেটি সুস্থ কিনা তা যাচাই করেন না।
- বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে না কেনা: পরিচিত বা বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে পশু কেনা নিরাপদ, কারণ তারা সাধারণত প্রতারণা করেন না।
- পশুর দাঁত পরীক্ষা না করা: গরুর ক্ষেত্রে দুই বছর বয়স হলে দুটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে। দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায়।
- পশুর লেজ ও কান পরীক্ষা না করা: যদি পশুর লেজ বা কান অর্ধেকের বেশি কাটা থাকে, তাহলে সেটি কুরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
- পশুর শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ না করা: ট্যাবলেট খাওয়ানো পশুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে এবং প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url