বাংলাদেশে বড় দিনের সরকারি ছুটি ২০২৫ সম্পর্কে অজানা কথা
প্রতি বছর ডিসেম্বরে ২৫ তারিখ যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সকল মানুষ বড়দিন উদযাপন করে থাকে। এই দিনটি খ্রিস্টান ধর্মালম্বি সকলের কাছে উৎসবের মতো। তাইতো এই দিনটি তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। যিশুখ্রিস্টের বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়ে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বড়দিন ২০২৫ সরকারি সাধারণ ছুটি হিসেবে নির্ধারিত রয়েছে। এই দিবসটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচাইতে বৃহৎ উৎসব হলেও সরকারিভাবে সকল প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ এই ছুটি ভোগ করে থাকেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ২০২৫ সালের যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিনে কখন সরকারি ছুটি থাকবে, বিশেষ করে অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম কেমন হবে এবং সরকারি ছুটি বিধিমালা মোতাবেক এই দিবসটি তথা ছুটির কার্যক্রম কেমন থাকবে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
বাংলাদেশে বড় দিনের সরকারি ছুটি ২০২৫
বাংলাদেশে বড় দিনের সরকারি ছুটি ২০২৫ বলতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় সাধারণ ছুটিগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিঠির একটি। বাংলাদেশের প্রচলিত সরকারি ছুটির বিধির আলোকে এই দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। মূলত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবের দিন হলেও এই দিনটি বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের নিকট সোহার্দ্য, ভাতৃত্ব ও শান্তির প্রতিক হিসেবে প্রতি বছর উদযাপিত হয়ে থাকে।
সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর এই দিনে সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, ব্যাঙ্ক-বীমা ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এদের মধ্য অনেক প্রতিষ্ঠান এই দিনটিকে বরণ করে নিতে অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। এই দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকার কারণে খ্রিস্টান ধর্মালম্বী সকলের সাথে এমনকি নিজেদের মধ্যে ভ্রাত্তিতের এক নজির সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের বড়দিনের ইতিহাস
পৃথিবীর বিভিন্ন খ্রিষ্টধর্মীয় দেশের মতোই বাংলাদেশেও এই ধর্মের সুত্রপাত ঘটে আনুমানিক ১৬শত দশকের দিকে। ইতিহাস ঐতিহ্যের ডামাডোলে বাংলাদেশও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। ইতিহাসবিদদের বিশ্লেষণে উঠে আসে যে, আনুমানিক ১৬শ শতকে পর্তুগিজ ব্যবসায়ী ও খ্রিস্টান মিশনারীদের হাত ধরে এই উপমহাদেশে খ্রিস্ট ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। মূলত তারা বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার লক্ষে। সে থেকে বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মের পথ চলা। ধাপে ধাপে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ওঠে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় গির্জা, প্যাগোডা ও বসবাসের জন্য খ্রিস্টান পাড়া।
সেই ১৬০০ শতকের প্রারম্ভ থেকে এই দেশে নানা উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎসবটি খ্রিস্টান ধর্মালম্বী সকল নারী-পুরুষ একসঙ্গে উদযাপন করে থাকে। যার কারণে সকলের মধ্যে ভালোবাসার ও সম্প্রীতির মিলন ঘটে। বাংলাদেশে বড়দিন প্রতিবছর কেবলমাত্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই দিনটি পালিত হয় না বরং এই দিনটির বিশেষত্বের কারণেই জাতীয়ভাবে ব্যাপক সম্প্রীতি ও ভাব-গাম্ভীর্যের মাধ্যমে উদযাপিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও খ্রিস্টান ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর নিজস্ব ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে এর বিশেষত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। প্রধান ধর্মপ্রদেশ ও উল্লেখযোগ্য গির্জার মধ্যে তাদের উপাসনালয়গুলো মুলত বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশভিত্তিক সংগঠিত হয়ে থাকে। নিম্নে বাংলাদেশে প্রধান ধর্মপ্রদেশ ও উল্লেখযোগ্য গির্জাগুলোর নাম আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হল।
১) ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশঃ সেন্ট মেরি'স ক্যাথেড্রাল, রমনা, ঢাকা।
২) চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশঃ পাথরঘাটা রোমান ক্যাথলিক চার্চ, চট্টগ্রাম।
৩) খুলনা ধর্মপ্রদেশঃ সেন্ট জোসেফস গির্জা, খুলনা।
৪) ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশঃ সেন্ট পলস চার্চ, ময়মনসিংহ।
৫) রাজশাহী ধর্মপ্রদেশঃ সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গির্জা, রাজশাহী।
৬) দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশঃ সেন্ট ফিলিপস গির্জা, দিনাজপুর।
আরও পড়ুনঃ পলাশী দিবস কত তারিখ-পলাশী দিবস কত সালে
অন্যান্য উপাসনালয় ও সম্প্রদায়
অন্যান্য উপাসনালয় ও সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম একটি গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন যা নেত্রকোনায় বিরিশিরিতে অবস্থিত। এটি মূলত গারো আদিবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয়। আবার টেস্টান্ট ও অ্যাংলিকান গির্জা যা ঢাকায়সহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
বড়দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা
বড় দিনের গুরুত্ব বিবেচনা করলে প্রথমেই আসে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন কবে। মুলত খ্রিস্টান ধর্মালম্বি সকলেই এই দিনটিকে যিশু খ্রিস্টের জন্মউৎসব হিসেবে খুবই উৎসাহ উদ্দীপনায় পালন করে থাকে। খ্রিস্টান সম্প্রদায় সকলেই এই দিনটিকে খুবই মহাত্ত্যপূর্ণ, ত্যাগ তিথিক্ষা, ভালোবাসা ও মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে থাকে। এই দিনটির গুরুত্ব বিবেচনা করে গির্জা বা উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়, পাশাপাশি খ্রিস্টান কমিউনিটিগুলোতে কেককাটা, আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত করা হয়। একই সাথে আনন্দমুখর পরিবেশে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করে থাকে বলে খ্রিস্টান সম্প্রদায় ছাড়াও সকলেই এই ছুটি সমানভাবে ভোগ করে। জার কারণে এই দিবসটির গুরুত্ব ক্রমান্নয়ে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ মাছরাঙা পাখির গায়ের রং ও জীব বৈচিত্র্য
বড়দিন কি বার্তা নিয়ে আসে
খ্রিস্টান ধর্মপ্রান সকলের কাছে প্রতিবছর বড়দিন যে বার্তাটি নিয়ে আসে তা হল শান্তি ও মানবতার বার্তা। খ্রিস্টান ধর্মপ্রান সকলেই এইও মনে করে থাকে যে, এই দিনটিতে যিশু স্বয়ং পৃথিবীতে আবর্তিত হয়েছিলেন মানবকল্যানে, পাপ কার্য থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে, ভালোবাসা ও শান্তির বার্তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে। বড়দিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সকলের কাছে প্রধানত উৎসবের দিন। এই দিনটিকে উপলক্ষ করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সকলেই যার যার অবস্থান থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে থাকে।
অর্থাৎ, খ্রিস্টান ধর্মপ্রাণ মানুষদের কাছে বড়দিন শুধু উৎসবই নয় এটি অন্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, ধর্মীয় ভক্তি ও আত্মার সেতুবন্ধন। বিশেষ করে বড়দিন মানুষের মধ্যে একে অন্যকে ক্ষমা করার প্রবণতা শেখায়, অসহায় দুঃস্থদের সাহায্য করার প্রবণতা বৃদ্ধি করে এমনকি ভালোবাসার মধ্যে জীবনকে গড়ে তোলায় কৌশল শেখায়।
বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশে ছুটির আমেজ কেমন থাকে
যদিও বড়দিন অর্থাৎ ক্রিসমাস ডে মূলত খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়া সত্ত্বেও এই দিনটিতে বাংলাদেশে সকল প্রকার সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও আদালত সরকারি নির্বাহী আদেশে বন্ধ থাকে। বাংলাদেশে এই দিনটিতে সাধারণ ছুটি থাকে বিধায় খ্রিস্টান ছাড়াও মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায় সকলেই ছুটির আওতাভুক্ত থাকে। যার কারণে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন
ক্রিসমাস ডে-তে বাংলাদেশে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানমালা কেমন হয়
বড়দিন অর্থাৎ ক্রিসমাস ডে-তে বাংলাদেশে অনুষ্ঠানমালা কেমন হয় তা আমাদের অনেকেরই কম বেশী অজানা। এই দিনটিকে উপলক্ষ করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সকলেই যার যার অবস্থান থেকে নিজস্ব প্রার্থনার জায়গা বিশেষ করে গির্জা, বাসাবাড়ি ও বাড়ীর আশেপাশের এলাকা সাজিয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রার্থনার জায়গাগুলো এই দিনে বিশেষ আলোকসজ্জা বৃদ্ধি করে থাকে। ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত থাকে ধর্মীয় অনুরাগীরা ক্রমান্বয়ে প্রার্থনা করতে থাকে। তাছাড়া বড় দিনের প্রাত্যয়ে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় অনুরাগীরা দিনটি শুরু করে। গির্জায় বড় দিন উপলক্ষে বিশেষ করে সু-মধুর ক্যারল গান গাওয়া হয়ে থাকে। এর ফলে মনে আনে প্রশান্তি ও আত্ম-তৃপ্তি। এই দিনে শিশু-কিশোরদের আনন্দ দেয়ার জন্য সান্তা ক্লজ তো আছেই। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন তো দিনব্যাপি থাকছেই। সন্ধ্যায় সান্ধ্যকালীন নানাবিদ বিনোদনমূলক পার্টি ও ডি-জে কনসার্টের মাধ্যমে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
বাংলাদেশে বড়দিনে জরুরী সেবার ক্ষেত্রে ছুটির নির্দেশনা কি
বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির দিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত নির্দেশনানুযায়ী যে কোন সরকারি ছুটির দিনে সুনির্দিষ্ট জরুরী সেবা সূমুহ চালুর বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। যেমন-হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, জরুরি ফায়ার সার্ভিস, পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দপ্তরে নিয়োজিত, বন্যা দুর্গত এলাকা সমুহে জরুরি সেবার কাজে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও জরুরি ত্রান সরবরাহ কাজের সাথে সম্পৃক্ত যে কেউ। এই সকল জরুরি সেবা ছাড়াও জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে বড় দিনের ছুটির আওতাবহির্ভূত রাখা হয়।
ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য বড়দিনের ছুটি কেমন কাজে লাগে
ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য বড়দিনের ছুটি হতে পারে একটি আনন্দময় মুহূর্ত। বিগত বছরের ন্যায় এই বছরেও বাংলাদেশে সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ বড়দিনে সাধারণ ছুটি রয়েছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ছাড়াও বাংলাদেশে সকল ধর্মালম্বি এই দিনটিতে সাধারণ ছুটির আওতাভুক্ত থাকে। বিশেষ করে যারা ভ্রমন পিয়াসু অর্থাৎ ভ্রমন অনুরাগী সকলেই এই দিনটিকে উপলখ্য করে স্বপরিবারে অথবা বন্ধু-সহপাটী নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পছন্দ করে থাকেন। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ঋতু পরিবর্তনের কারণে হালকা শীতে কোথাও বেড়াতে যাওয়া কতইনা আনন্দের ও আত্ম তৃপ্তির।
আপনাকে প্রথমেই মনস্থির করতে হবে কিভাবে এই সময়টিকে আপনি উপভোগ করতে চাচ্ছেন। সরকারের নির্ধারিত সাধারণ ছুটির পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও শনিবার মিলিয়ে আনন্দময় ভ্রমন হতে পারে আপনার। বিশেষ করে তিন দিনের ছুটি থাকার কারণে যে কোন দর্শনীয় স্পটে পর্যটক সংখ্যা বেশি হতে পার যার জন্য আপনাকে ১০ দিন আগে থেকে যাত্রার টিকিট কাটা থেকে শুরু করে পর্যটন স্পটের হোটেল বুক করে নেওয়ায় শ্রেয়। নিম্নে আপনাদের জন্য কিছু পর্যটন স্পট সম্পর্কে সম্যুখ ধারণা দেওয়া হলো যা আপনাদের পর্যটন স্পট পছন্দের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে আশা করছি।
আরও পড়ুনঃ কোন সময়ের রোদে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়
কক্সবাজার সমুদ্র বীচঃ যারা সমুদ্রের করতাল ভালবাসেন তাদের জন্য বাংলাদেশে বঙ্গপোসাগর তীর ঘিরে অবস্থিত কক্সবাজার সমুদ্র বীচ হতে পারে প্রধানত পছন্দ। কক্সবাজার সমুদ্র বীচটি এতই বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে অবস্থিত যা আমাদের মন জুড়িয়ে যায়। শীতের শুরু অথবা শেষের দিকে এই স্পটে ঘুরতে যাওয়া হতে পারে প্রশান্তির আচ্ছাদন। মৌসুমের ডিসেম্বরের শেষে শীতকালে এখানে পর্যটকদের অত্যধিক আনাগোনা বেশী হওয়া সত্ত্বেও এখানে সাগরের মনমুগ্ধকর ঢেউ, ইনানী বীচে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য মনকে করে তোলে প্রাণবন্ত। তাছাড়া সৈকত তীরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রকৃতির সামুদ্রিক খাবার অর্থাৎ সি-ফুড যা আপনাকে দিবে নতুন নতুন স্বাদ ও পূর্ণাতার সমাহার। এছাড়াও শপিং প্রেমীদের জন্য তো থাকছেই মার্কেট, যেখানে থাকছে শামুকের তৈরি ঘর সাজানোর নানান শৈল্পিক জিনিষপত্র। এছাড়া রয়েছে মেয়েদের অথবা ছেলেদের জন্য বাহারি রংয়ের সাজ সজ্জার সৌখিন ব্যবহারযোগ্য। তাইতো, বড়দিনের ছুটিতে কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা হতে পারে প্রধান পছন্দের একটি। তাছাড়া সমুদ্র সৈকত দেখার পাশাপাশি আপনি ইচ্ছা করলে হিমছড়িও ঘুরে দেখে যেতে পারেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ বড়দিনের ছুটিতে একটু বিনোদনের জন্য পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। আমাদের মধ্যে যাদের শৈবাল, দ্বীপ ও নীল সমুদ্র পছন্দ তারা এই বড় দিনের ছুটিতে একটু প্রাশান্তির জন্য সেন্টমার্টিন হতে পারে পছন্দের অংশ। সেন্টমার্টিন দ্বীপটির আরও একটি আকর্ষণ হল এখানে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ছাড়াও রয়েছে অজস্র নারিকেল বাগান যা সেন্টমার্টিন কে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বিশেষ করে নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই দুইটি মাস সেন্টমার্টিন ভ্রমণে উপযুক্ত সময়। শীতকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমন পিয়াসুদের আনাগোনা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর মাসে শীতের আমেজ কম থাকে বিধায় এই দ্বীপ ভ্রমণের জন্য মুখ্যম সময় হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা
সাজেক ভ্যালিঃ বাংলাদেশে পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা। সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমনের জন্য শীতকালই উপযুক্ত সময়। শীতকালে এই পর্যটন স্পটের আবহাওয়া থাকে মনমুগ্ধকর, ভোরের শিশির ভেজা কুয়াশা ও সু-উচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘেদের সমুদ্র এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। বড়দিনের ছুটিতে আপনি ইচ্ছা করলে সাজেক ঘুরে আসতে পারেন। তবে, পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হলে আপনাকে প্রচুর পরিশ্রমের সম্মুখীন হতে হবে। সাথে শুকনো খাবার, খাবার পানি, সেফটি ব্যাগ, ছাতাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী অবশ্যই সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের সাজেক ভ্যালি গমন পরিহার করাটাই শ্রেয়। যারা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পছন্দ করেন তাদের এই বড় দিনের ছুটিতে সাজেক ভ্রমণ হতে পারে সুন্দর অভিজ্ঞতা।
বান্দরবানঃ এই বড় দিনের ছুটিতে বান্দরবন ভ্রমন হতে পারে আপনার জন্য অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু। সাজেক ভ্যালির ন্যায় বান্দরবনেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে পাহাড় ও সবুজের সমাহার। বিশেষ করে প্রকৃতিপ্রেমী ও পাহাড়ি দৃশের ছবি মনের ক্যানভাসে জায়গা করে নিতে চান তাদের জন্য বান্দরবন ভ্রমণ সবসময়ই পছন্দের জায়গা। তাইতো বড়দিনের ছুটিতে আপনি মনে করলে একটু পাহাড়ি সবুজের সাথে গা মিলিয়ে একটু সুভাস নিতে পারেন। বান্দরবনে ঘুরতে আসলে আপনি শহরে পরিবেশ থেকে নিজেকে একটু আলাদা করে পরিবেষণ করার সুযোগ করে নিতে পারেন। এখানকার নীলগিরি, নাফাখুম ঝর্ণা, নীলাচল, রুমা বাজার ও কেওক্রাডং ট্রেক ও পাহাড়ি উপজাতির জীবন ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা দারুন এক অনুভূতির জন্ম দেয়।
শ্রীমঙ্গলঃ বড়দিনের এই ছুটিকে উপলক্ষ করে অনেক পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শ্রীমঙ্গল। আপনি ইচ্ছা করলে একটি প্রশান্তির জন্য শ্রীমঙ্গল ভ্রমণকে বেছে নিতে পারেন। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ চায়ের বাগান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত অথবা জাফলং, লাউইয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যান এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড়দিনের ছুটিকে আরও মনমুগ্ধকর করতে পারে। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের চায়ের বাগানের মধ্য দিয়ে একটু হেঁটে বেড়ানো বা পর্বতের ঝর্ণায় নিজেকে একটু শীতল করার সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। এক কথায় যারা কিছুটা নিরিবিলি ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই স্পটটি হতে পারে আকর্ষণীয়।
আরও পড়ুনঃ বজ্রপাতের কারণ ও বাঁচার উপায় জানুন
ভোলার সাদা পাথরঃ
ভোলার সাদা পাথর বাংলাদেশের সীমান্ত তীরবর্তীতে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার মহিমা। স্থানটি এতোই মনোরম ও সুন্দর যে যেকোন পর্যটককে খুবই আকৃষ্ট করে থাকে। মূলত এটি সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাথর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত এবং দিনে দিনে ভ্রমন পিয়াসুদের নিকট স্থানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। ধলাই নদীর পরিস্কার পানি, নদীর চারিপাশে সবুজ পাহাড়, আর নদীর বুকচিড়ে ছড়ানো ভোলার সাদা পাথর এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সাদা পাথর দেখার পাশাপাশি আপনি ইচ্ছা করলে কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন- উৎমাছড়া ও তুরংছড়া পাহাড়ি ঝর্ণা, লাক্কাতুর চা বাগান এবং রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট যা আপনাকে নতুন এক অনুভূতির জন্ম দিবে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন। তাই বড়দিনের ছুটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে আপনি ভোলার স্পটকে বেছে নিতে পারেন।
সুন্দরবনঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিশ্বের সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সুন্দরবন। বড়দিনের ছুটিতে কিছুটা বিনোদনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমন হতে পারে একটি আকর্ষণীয় স্পট। আপনি যদি সন্দরবন যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন তাহলে হাতে একটু সময় নিয়ে অবশ্যই ভ্রমন করুন। বিশেষ করে একাকীত্ব ভ্রমন না করে স্ব পরিবারে বা বন্ধু বান্ধবের সাথে নিয়ে ভ্রমন করতে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। বড়দিনের ছুটিতে সুন্দরবন ভ্রমণে যেয়ে এমনও হয়তোবা জাতীয় বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী, প্রাকৃতিক গাছ-গাছালি ও নদী দ্বারা আবর্তিত বনজঙ্গল খুব কাছ থেকে দেখে নিতে পারবেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং বিস্তারিত জানতে পেরেছেন বাংলাদেশে বড় দিনের সরকারি ছুটি ২০২৫ সম্পর্কে অজানা কিছু কথা। আশা করি, এই সকল তথ্যগুলো আপনাদের বড় দিনের ছুটিকে উপভোগ করার ক্ষেত্রে খুবই উপকারে আসবে। তাই, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেশি বেশি জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করার অনুরোধ জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিলাম, ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url