লেবুর শুধু রস নয়, খোসায়ও রয়েছে নানা উপকারিতা
লেবু যে ভিটামিন-সি তে ভরপুর তা আমরা অনেকেই জানি এবং সময় সময় এর প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করি। পুষ্টিবিদগণের মতে শুধুমাত্র লেবুর রসে নয়, খোসাতেও রয়েছে নানাবিদ উপকারিতা। আমরা কিভাবে এই লেবুর খোসাকে স্বাস্থ্যকর হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। এ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পেতে আজকের আর্টিকেলটি হতে পারে আপনার জন্য সহজ সমাধান।
খাবারের টেবিলে, শরবতে, বেকিং কেক তৈরিতে, ত্বকের যত্নে বা স্বাস্থ্য সুরক্ষায়, খাবারে স্বাদ আনার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু রান্নার উপকরণ হিসেবে লেবুর ব্যবহার ও চাহিদার ব্যপকতা অত্যধিক। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম থেকে ঘরে ফিরে একটু লেবুর শরবত শরীরে আনে অনাবিল প্রশান্তি। যদিও লেবু একপ্রকার ফল, এর রস ছাড়া প্রত্যেকটি অংশই আমরা কাজে লাগাতে পারি। জাত বেঁধে লেবু ছোট-বড় হলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে নানান গুণাগুন। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা লেবুর খোসার রাসায়নিক গঠন, স্বাস্থ্য উপকারিতা, পরিবেশগত ভবিষ্যৎ দিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরুক্ষা দিক নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্রঃআমরা সাধারণত লেবুর রস চিবিয়ে এর খোসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু এই খোসার মধ্যেই যে রয়েছে অজস্র সকল উপাদান, যা আমাদের শরীর গঠনে হতে পারে এক চমকপ্রদ পন্থা। লেবুর রস যেমন স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকরী, ঠিক তেমনি লেবুর খোসাতেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। লেবুর খোসায় এমন সব পুষ্টিকর উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা লেবুতেও খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, লেবুতে যে পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে তার চাইতে প্রায় ৫-১০ গুণ বেশি রয়েছে লেবুর খোসায়। তার সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম।
গ্রামাঞ্চল অথবা শহরে দিনের কোন একটি সময়ে অথবা বিভিন্ন উৎসবে লেবুর রসের ব্যবহার এখন পর্যন্ত কোন অংশে কমে নাই। পাশাপাশি লেবুর খোসার ব্যবহারও জায়গা করে নিয়েছে। ঔষধ তৈরি করা থেকে শুরু করে, রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করতে, রূপচর্চাসহ এমন অনেক কিছু রয়েছে এই লেবু ফল ছাড়া আমরা কোনভবেই চিন্তা করতে পারি না। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পুষ্টিবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে লেবুর পাশাপাশি লেবুর খোসাও এর ঐতিহ্যকেই সমর্থন করে। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে লেবুর খোসা সম্পর্কে প্রথম থেকে শেষ অবদি নতুন নতুন ধারণা প্রদান করবো। আজকের আর্টিকেলটি প্রযুক্তি বিষয়ক ভাবনার নতুন উৎস হিসেবে আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। চলুন প্রথমেই জেনে নেই লেবুর খোসার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে।
লেবুর খোসার রাসায়নিক গঠন
লেবুর খোসার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই একে আমরা দুইটি স্তরে ভাগ করতে পারি।
১। লেবুর আউটার জেস্ট অংশ: লেবুর আউটার জেস্ট হল এর উজ্জ্বল হলুদ অংশ যার মধ্যে থাকে সুগন্ধি তৈল।
২। লেবুর ইনার পিথ অংশ: লেবুর ইনার পিথ অংশ হল এর সাদা অংশ। বিশেষ করে এই সাদা অংশ অনেকটাই তিক্ত স্বাদের হয়ে থাকে।
তবে, লেবুর খোসায় যে কিছু উপাদান রয়েছে তা আমাদের অনেকেরই এ সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা নেই বললেই চলে। নিম্নে কিছু রাসায়নিক উপাদান আপনাদের জানার সুবিধার্থে তুলে ধরা হল।
- লিমোনিন উপাদানঃ বিশেষ করে ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী।
- ডি-লিমোনিন উপাদানঃ লেবুর খোসায় সমৃদ্ধ ডি-লিমোনিন উপাদান আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ক্লিনার ও ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে।
- লিমোনিন গ্লকোসাইডঃ লেবুর খোসায় থাকা লিমোনিন গ্লকোসাইড মানবদেহের শরীরে একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।
- ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদানঃ আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং শরীরে থাকা কোষকে রক্ষা করে।
- ভিটামিন সি, এ ও ই উপাদানঃ লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ভিটামিন-সি এর বিকল্প নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ বাজারে হরেক রকমের দেশীয় ও বিদেশী জাতের ফল আমরা সাধারণত পেয়ে থাকি। এই সমস্ত ফলমূল গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরে এক ধরনের এন্টি প্রটেকশন বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ভিটামিন সি জাতীয় ফলের মধ্যে লেবু কোন অংশে কম নয়। আপনি সহজ পন্থা হিসেবে লেবু রস ও খোসা সহজেই গ্রহণ করতে পারেন। চলুন নিম্নে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করি কিভাবে লেবুর খোসা আমাদের শরীরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুনঃ দেশীয় কোন মাছে ওমেগা ৩ বেশি থাকে জানুন
ক) এন্টি অক্সিডেন্ট
এন্টি অক্সিডেন্ট হলো এক ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যা লেবুর খোসায় যথেষ্ট বিদ্যমান। লেবুর খোসার মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও ভিটামিন-সি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল জাতীয় ক্ষতি হতে পরিত্রান দেয়। নিয়মিত গ্রহণের ফলে বিশেষ করে আপনার শরীরে বয়সের ছাপ আসতে একটু হলেও দেরি করে অর্থাৎ বার্ধক্যে পৌঁছাতে কিছুটা হলেও দেরি করে। বিশেষ করে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
খ) হৃদরোগ প্রতিরোধে
আমরা প্রতিনিয়তই কম-বেশি বয়সী কেউ না কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। হৃদরোগ বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক অথবা বৃদ্ধ বয়সে যেকোনো সময় হওয়ার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি রয়ে যায়। আপনি যদি নিয়মিত লেবুর খোসা খেতে পারেন এটি একসময় আপনার শরীরে হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে লেবুর খোসায় যে পরিমাণ পলিফেনল পাওয়া যায় তা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যধিকভাবে কমিয়ে থাকে। সাথে সাথে লেবুর খোসা আমাদের ধমনীকে সুরক্ষা করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে মুক্তি দেয়।
গ) ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে
বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস সমস্যা একটি মহামারী সমস্যা। এই ডায়াবেটিস সমস্যা আমাদের শরীরে নীরবে নিভৃতে বসবাস করে, যার কারণে একে অনেকেই শরীরের নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে। এক্ষেত্রে লেবুর খোসা হতে পারে যুগান্তকারী সমাধান। এক্ষেত্রে লেবুর খোসায় থাকা উপাদান আমাদের শরীরে ইনসুলিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে থাকে। আবার লেবুর খোসায় অন্তর্নিহিত ফাইবার আমাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ট সহায়ক হয়।
ঘ) হজম কার্যে সহায়ক
বদহজম আমাদের এখন একটি প্রতিনিয়ত সমস্যা। প্রতিদিন রান্না-বান্নায় তৈলাক্ত খাবার আমরা যেভাবে খাই যার ফলে বদহজম বা গ্যাস ফর্ম করাটা মন্দের কিছু নয়। কিছু খেলেই মনে হয় যেন পেট ফাফা করছে। তাই, এক্ষেত্রে এই জটিল পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে লেবুর খোসা হতে পারে টুটকা সমাধান। লেবুর খোসায় থাকা ডি-লিমোনিন আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উজ্জিবিত করে এবং গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা দূরীভূত করে।
ঙ) ওজন নিয়ন্ত্রণ
জানা যায় ওজন নিয়ন্ত্রণেও লেবুর খোসা বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে লেবুর খোসায় থাকা পেকটিন নামীয় ফাইবার পেটের ক্ষুধাকে দূর করতে ফলপ্রসূ। যার কারণে আমাদের মাত্রাত্রিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এরপরে আমরা জানবো ত্বক ও চুলের যত্নে লেবুর খোসা কতটুকু কার্যকরী। চলুন জেনে নেই ত্বক ও চুলের যত্নে লেবুর খোসার ব্যবহার সম্পর্কে।
লেবুর খোসার দ্বারা ত্বক ও চুলের যত্ন
১। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে
লেবুর খোসায় যে উপাদান রয়েছে তা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে আপনি লেবুর খোসা যদি মিহি গুঁড়া করে তার সাথে পরিমাণমতো ১ টেবিল চা চামচ মধু ও দই মিশিয়ে প্রসাধনী তৈরি করে তা ত্বকে নিয়মিত লাগিয়ে ব্যবহার করে ভালো উপকার পেতে পারেন।
২। ব্রণ ও মুখের দাগ কমাতে
ব্রণ ও মুখের দাগ কমানোর ক্ষেত্রেও লেবুর খোসা হতে যুগান্তকারী সমাধান। বাজারে হরেকরকমের অনেক প্রসাধনী পাওয়া যায় যা মুখের ব্রুণ ও বিস্রি দাগ দূর করতে আপনি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই আশানরুপ ফল পাচ্ছেননা। অবশেষে অনেকটা হতাশ হয়ে পরেছেন। তবে চিন্তার কারণ নেই। লেবুর খোসায় যে পরিমাণ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে তাতে করে আপনার মুখের ব্রণ ও তৈরি হওয়া দাগ নিমিষেই হালকা করতে সহায়ক হবে আশা করছি।
৩। মাথার খুশকি প্রতিরোধে
মাথার খুশকি এখন সব বয়সের জন্য নিত্য দিনের সমস্যা। মাথার খুশকি প্রতিরোধে আপনি কত কিছুই মেখেছেন। কিন্তু খুশকি সেই অনুপাতে দূর হচ্ছে না। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে, লেবুর উপরিভাগের খোসা নিয়ে ব্লেন্ডার দিয়ে গুঁড়া করে সাতে ১ টেবিল চা চামচে পরিমাণমতো নারকেল তেল মিশিয়ে মাথায় নিয়মিত ম্যাচেজ করুন দেখবেন খুশকি কমে যেতে পারে। আবার লেবুর খোসা চুলে ব্যবহার করলে চুলের গোরা মজবুত করতেও সহায়তা করে।
প্রতিষেধক কাজে লেবুর খোসার ব্যবহার
১) বাসা-বাড়ি পরিস্কারে লেবুর খোসা
লেবুর খোসা বিভিন্ন প্রকার পরিষ্কারের কাজে এখন খুবই পছন্দনীয় একটি বিশেষ মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে লেবুর খোসায় রয়েছে ডি-লিমোনিন। আর এই ডি-লিমোনিন হচ্ছে এক ধরণের শক্তিশালী ডিগ্রিজার। আপনি চাইলে লেবুর খোসাকে ভিনেগারের সাথে মিশ্রিত করে বাসা-বাড়ির ফ্লোর বা মেঝে পরিস্কারের দ্রবণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
২) বায়ু দুর্গন্ধমুক্ত করতে লেবুর খোসা
বিশেষ করে লেবুর খোসা বায়ু দুর্গন্ধমুক্ত বা দূষণমুক্ত করতে বিশেষভাবে কাজ করে। এর বিশেষত্ব হলো এটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরে অথবা বাহিরে জ্বালালে ঘরের অথবা বাহিরের বায়ুর দুর্গন্ধ কমতে সহায়তা করে। এক পর্যায়ে এ থেকে সুগন্ধ ছড়িয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ চিয়া সিড প্রতিদিন খেলে কি হয়
৩) পোকামাকড় থেকে নিস্তার পেতে
পোকামাকড় থেকে নিস্তার পেতে আপনি ইচ্ছা করলে লেবুর খোসাকে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। বিশেষ করে লেবুর খোসার গন্ধ অনেক পোকামাকড়ের জন্য শত্রু। গবেষণায় প্রমাণিত হয়, এটি প্রাকৃতিক রিপেলেন্ট হিসেবেও কাজ করে থাকে।
বিভিন্ন প্রকার খাদ্য অথবা পানীয়তে লেবুর খোসার ব্যবহার
১. লেবুর খোসার জেস্ট
লেমন জেস্ট বলতে আমরা সাধারণত বুঝে থাকি তা হল, লেবুর পাতলা হলুদ স্তর যা ফ্লেভেডো নামেও শুপরিচিত। এটি মূলত লেবুর উপরিভাগের সবুজ অংশ যার মধ্যে রয়েছে তীব্র লেবুর ঝাজ। এই সবুজ চামড়ার অংশের তলনিতে থাকা সাদা আবরণটি ফেলে দিয়ে লেবুর এই জেস্ট সংগ্রহ করা হয়। জেস্ট মূলত বিভিন্ন প্রকার বেকিং কাজে, কেক তৈরিতে, সস বানাতে, ড্রিংকস দ্বারা ককটেল তৈরিতে, সালাদ তৈরিতে ও খাবারে স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে লেমন জেস্টের বৈশিষ্ট্য হল এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুগন্ধ ও স্বাদযুক্ত তৈল থাকে। এই সুগন্ধ ও স্বাদযুক্ত তৈল লেবুর স্মেইল বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২. ইনফিউজড ওয়াটার বা ডিটক্স ওয়াটার
ইনফিউজড বা ডিটক্স ওয়াটার হচ্ছে এক ধরণের মিশ্রণ জাতীয় পানি, যার মধ্যে ফলের প্রকারভেদ, মশলা ও ভেষজ মিশিয়ে তাকে সুস্বাদু করা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত বিধায় পানির বিকল্প হিসেবেও আপনি ডিটক্স ওয়াটার পান করতে পারেন। আপনি যদি নিমিত ডিটক্স ওয়াটার পান করতে থাকেন, তাহলে এক সময় দেখা যাবে আপনার প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার ইচ্চা শক্তি ও প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। শরীরে ঠাণ্ডা জাতীয় সমস্যা যেমন-সর্দি, কাশি ও অ্যালার্জির সমস্যার প্রকোপ কমতে শুরু করবে।
শীতকাল আসলেই আমাদের ঠান্ডা জনিত নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। বিশেষ করে শীতে বেশি পরিমাণে পানি খাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যায়। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার গরমকালেও আমাদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা উদ্ভূত হয়। অর্থাৎ, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং গরমকালে অথবা শীতে বিভিন্ন প্রকার ভাইরাসজনিত ঠান্ডা থেকে নিজেকে সুরক্ষা রাখতে ইনফিউজড ওয়াটার (Infused Water) বা ডিটক্স ওয়াটার হতে পারে আপনার জন্য উৎকৃষ্ট সমাধান।
আরও পড়ুনঃ যে খাবার রাতে খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
৩. চা
লেবুর খোসা দিয়ে চা খাওয়ার কথা শুনলে অনেকেই অবাক হবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনাদেরকে আমরা জানাবো কিভাবে লেবুর খোসার চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। লেবুর খোসার চা বিশেষ করে আমাদের হজমশক্তি উন্নত করতে, পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এর গুনাগুণ অপরিসীম। লেবুর খোসায় তৈরি চায়ের মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের অন্ত্রের উন্নতির জন্য বিশেষভাবে সহায়ক। লেবুর খোসায় থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ভূমিকা রাখে।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
লেবুর খোসার চা তৈরি করতে আপনি যা যা করবেন, তা হল প্রথমেই একটি ব্যবহার উপযোগি পরিষ্কার পাত্র বা ফ্রাইপেনে খানিকটা পানি নিন। পানিতে কিছু আদার টুকরা ও লেবুর খোসা একসাথে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। তারপর ফুটানো পানি ঠাণ্ডা করে তা ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। পানি ভালভাবে ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তার সাথে একটু কিঞ্ছিত মধু মিশ্রিত করে তারপর সেটি খেতে পারেন।
লেবুর খোসার পরিবেশগত ভবিষ্যৎ দিক
আমরা সাধারণত লেবুর রস নেওয়ার পর লেবুর খোসা ফেলে দেই। কিন্ত পরিবেশগত দিক থেকে লেবুর খোসার যে আরও কতো উপকারিতা রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। বিশেষ করে লেবুর খোসা ময়লা-আবর্জনা প্রতিরোধে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে এমনকি প্রাকৃতিক ক্লিনার হিসেবেও এর ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে লেবুর রসের পাশাপাশি লেবুর খোসাও বেশ সুফল বয়ে আনছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, লেবুর খোসার লিমোনিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড ভবিষ্যতে ক্যান্সার নিরাময়ের ড্রাগ উদ্ভাবনীতেও সাহায্যকারী হিসেবে প্রকাশ লাভ করতে পারে। ভারতীয় আয়ুর্বেদে লেবুর খোসা হজম, ত্বক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে লেবুর খোসার ডি-লিমোনিন দ্বারা ভবিষ্যতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সহজেই করা যাবে অর্থাৎ স্মার্ট ক্লিনিং কাজ নিমিষেই করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেবুর খোসা দিয়ে ঘর পরিষ্কারের পাশাপাশি রূপচর্চায়, চুলের যত্নে ও পোকার আনাগোনা প্রতিরোধেও কাজে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে লেবুর খোসা পেকটিন এবং সেলুলোজ দ্বারা নতুন নতুন প্লাস্টিক সামগ্রি তৈরিতেও অবদান রাখছে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিসের উপসর্গ নিয়ে কিছু কথা
মানসিক স্বাস্থ্য সুরুক্ষা দিক
আমাদের স্বাস্থ্য সুরুক্ষার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সুরুক্ষার দিকটাও খেয়াল রাখা উচিৎ। বিশেষ করে লেবুর খোসার গ্রাণ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন জাতীয় উপাদান নিঃসৃত করে। যা আপনার খারাপ মনকে প্রফুল্ল রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। অনেকসময় দেখা যায় লেবুর খোসার সুবাসকে অনেকেই থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। থেরাফি হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে দেখা যায় মনের বিষণ্নতা কমতে শুরু করে।
শেষ কথা
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং লেবুর শুধু রস নয়, খোসায়ও রয়েছে নানা উপকারিতা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটিতে লেবুর খোসার রাসায়নিক গঠন, স্বাস্থ্য উপকারিতা, পরিবেশগত ভবিষ্যৎ দিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরুক্ষার দিক নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। একটা সময় মানুষ লেবুর খোসার বাহ্যিক ব্যবহার সম্পর্কে ততটা না জানলেও এখন লেবুর খোসার বৈজ্ঞানিক ব্যবহার সম্পর্কে সকলেই একটু একটু করে ধারণা পেতে শুরু করেছে। আরও উল্লেখ্য যে, অদূর ভবিষ্যতেও লেবুর খোসাকে গবেষণা ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজেও ব্যবহার করতে বিজ্ঞানীদের আপ্রান চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি, এই সকল তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। তাই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেশি বেশি জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করার অনুরোধ জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিলাম, ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url