OrdinaryITPostAd

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানী কি ? তা জানুন!!!

মুসলমানদের একটি আত্মত্যাগের দিন ঈদুল আযহা। জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ থেকে বার তারিখ পর্যন্ত শরীয়ত মোতাবেক কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানী দেওয়ার বিধান রয়েছে। পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) থেকেই কুরবানীর প্রচলন বিভিন্নভাবে ছিল। কিন্তু শরীয়তে প্রত্যেক নবীর কুরবানীর পন্থা একরকম ছিল না। মহান সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামিন আল্লাহ ইসলামের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর আত্মত্যাগের মহিমায় কুরবানী সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করে ও বিশেষ মর্যাদা পায়। এই কুরবানীর দ্বারা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ আমাদের ত্যাগের পরীক্ষা করে থাকেন। তাই আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে শরীয়ত মোতাবেক কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানী কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।




কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানী কি ? তা জানুন!!!


ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ হল_কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত। আর এই পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে হজ্জ, আর হাজীদের হজ্জ কার্যের অংশবিশেষ হিসেবে কুরবানীকে সংযুক্ত করে তার যথাযোগ্য মর্জাদা দেওয়া হয়েছে। তাই, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানী ইসলামের তাৎপর্যপূর্ণ বিধান ও বিশেষ ইবাদত। কুরবানীকে ‘সুন্নতে ইবরাহীমী’ নামে অভিহিত করা হয়।


কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক কুরবানী দুই ধরনের হয় যা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ-

ক) প্রথমত_হজ্জের মৌসুমে হজ্ব ও ওমরাকারীগণ মক্কা ও মিনায় নির্ধারিত স্থানে যথানিয়মে কুরবানী আদায় করে থাকেন। এ কুরবানীর বিধান সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা হজ্ব (আয়াত ২৭-৩৭), সূরা বাকারা (আয়াত ১৯৬), সূরা মাইদা (আয়াত ২ ও ৯৫-৯৭) ও সূরা ফাতহ (আয়াত ২৫)-এ বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া হাদীস শরীফেও এই সম্পর্কে বিশদভাবে ধারণা লাভ করা যায়।


খ) দ্বিতীয়ত_সাধারণ কুরবানী যা হজ্ব ও ওমরার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং এর স্থানও নির্ধারিত নয়। তবে এক্ষেত্রে সময় নির্ধারিত রয়েছে। যে তারিখে হজ্ব আদায়কারীগণ মিনা-মক্কায় কুরবানী করে থাকেন সে তারিখে অর্থাৎ যিলহজ্বের দশ, এগারো ও বারো তারিখে এ কুরবানী হয়ে থাকে। পৃথিবীর সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এই কুরবানীর বিধান আছে। ইসলামে ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পর এই কুরবানীকে মুমিন বান্দার জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে।



আল-কুরআনের আলোকে কুরবানীঃ


১) সূরা আনআমের ১৬১ থেকে ১৬৩ নং আয়াতে কুরবানীর বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। বিস্তারিত বিধি-বিধান মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সুন্নাতেও রয়েছে।


قُلْ اِنَّنِیْ هَدٰىنِیْ رَبِّیْۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ ۚ۬ دِیْنًا قِیَمًا مِّلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًا ۚ وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ۝۱۶۱ قُلْ اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَۙ۝۱۶۲ لَا شَرِیْكَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ۝۱۶۳


''আপনি বলে দিন, আমার প্রতিপালক আমাকে পরিচালিত করেছেন সরল পথের দিকে-এক বিশুদ্ধ দ্বীনের দিকে, অর্থাৎ একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের মিল্লাত (তরীকা), আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। আপনি বলুন, নিঃসন্দেহে আমার সালাত, আমার নুসুক, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছুই রাববুল আলামীন আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই। আমাকে এই আদেশই করা হয়েছে, সুতরাং আমি হলাম প্রথম আত্মসমর্পণ কারী।''


২) জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত_ মহানবী রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ঈদের দিন দু’টি দুম্বা যবেহ করেছেন। যবেহর সময় সেগুলোকে কিবলামুখী করে বলেছেন-


اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَا شَرِیْكَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ ، بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبرُ، اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَّأُمَّتِهِ.
(সুনানে আবু দাউদ ৩/৯৫, হাদীস : ২৭৯৫; মুসনাদে আহমদ ৩/৩৭৫ হাদীস : ১৫০২২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৮৯৯)


কুরবানীর শুরুতে নবীজির এই আয়াত ও দুআ পড়া থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুরবানী একটি খালিছ ইবাদত। উল্লেখিত আয়াতে ‘নুসুক’ শব্দের অর্থ ঈদুল আযহার কুরবানী। অর্থাৎ, এ আয়াত ও দোয়ার মধ্যে কুরবানী অবশ্যই শামিল রয়েছে।


৩) সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-


اِنَّاۤ اَعْطَیْنٰكَ الْكَوْثَرَؕ۝۱ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَ انْحَرْؕ۝۲ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ۠۝۳

এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর মাধ্যমে গোটা উম্মতকে সালাত (নামায) ও নাহর বা উট কুরবানীর আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে যেকোনো পশু যবেহ করাকেই ‘নাহর’ বলে। সূরা কাউসার এর এমন যবেহ উদ্দেশ্য, যা ইবাদত হিসেবে করা হয়। সেটা হচ্ছে হজ্ব ও ওমরার কুরবানী এবং ঈদুল আযহার সাধারণ কুরবানী। দেখা যায়, এই আয়াতে নামাযের যে আদেশ রয়েছে তাতে ঈদের নামাযও শামিল রয়েছে। উপরোক্ত আয়াতের আলোকে আল্লাহ তাআলা যে বিধান দান করেছেন তা পালন করার পদ্ধতি নবীজী তাঁর সুন্নাহর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসের কিতাবে বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন নামায পরবর্তী খুতবায় বলেছেন, এই দিনের প্রথম কাজ হল সালাত আদায় করা এরপর নহর (কুরবানী) করা। যে সালাত আদায়ের পর নুসুক (কুরবানী) করল তার নুসুক পূর্ণ হল এবং সে মুসলিমদের পথ অনুসরণ করল। আর যে সালাতের আগে যবেহ করল সেটা তার গোশতের প্রয়োজন পূরণ করবে, কিন্তু ‘নুসুক’ হিসেবে গণ্য হবে না।’



সুন্নাহর আলোকে কুরবানীঃ


সুন্নাহর আলোকে খাশদিলে কুরবানী করা একান্ত অবশ্যই। নিম্নে সুন্নাহর আলোকে কিছু সহীহ হাদীস উপস্থাপন করা হলো।


১) উম্মে সালামা রাঃ থেকে বর্ণিত, ''নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে কুরবানীর ইচ্ছা রাখে সে যেন যিলহজ্বের চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার নখ, চুল ইত্যাদি কর্তন না করে।


-সহীহ মুসলিম হাদীস ১৯৭৭/৩৯-৪২; তিরমিযী হাদীস ১৫২৩; আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯১; নাসায়ী হাদীস ৪৩৬২-৪৩৬৪, সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৮৯৭, ৫৯১৬, ৫৯১৭।


২) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দ্বীন বিষয়ে জানতে এসেছিল। ফিরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, ‘আমাকে ইয়াওমুল আযহার আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে।) এ দিবসকে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। লোকটি বলল, আমার কাছে যদি শুধু পুত্রের দেওয়া একটি দুধের পশু থাকে আমি কি তা-ই কুরবানী করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, বরং তুমি সেদিন তোমার মাথার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করবে) নখ কাটবে, মোচ কাটবে এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে।


-মুসনাদে আহমদ ২/১৬৯; হাদীস ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৭৭৩, ৫৯১৪; আবু দাউদ হাদীস ২৭৮৯; নাসায়ী হাদীস ৪৩৬৫।


৩) আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানী করল না (অর্থাৎ কুরবানী করার সংকল্প তার নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ -মুসনাদে আহমদ ২/৩২১; মুসতাদরাক হাকিম ৪/২৩১, হাদীস ৭৬৩৯।


৪) হযরত আলী রাঃ বলেন, ‘আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন আমরা যেন কুরবানী পশুর চোখ ও কান ভালো করে দেখে নিই এবং কান কাটা বা কান ফাড়া ও কানে গোলাকার ছিদ্র করা পশুর দ্বারা কুরবানী না করি। -মুসনাদে আহমদ ১/৮০; ১০৮, ১৪৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা হাদীস ২৯১৪-২৯১৫; আবু দাউদ হাদীস ২৮০৪; নাসায়ী হাদীস ৪৩৭৩-৪৩৭৪।


৫) বারা ইবনে আযিব রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘চার ধরনের পশুর দ্বারা কুরবানী করা যায় না। যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি অসুস্থ, যে পশু খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণ।’ -মুয়াত্তা মালিক ২/৪৮২; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৯১৯; নাসায়ী হাদীস ৪৩৭০-৪৩৭১; তিরমিযী হাদীস ১৪৯৭।


৬) আম্মাজান আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য একটি দুম্বা আনতে বললেন, যার শিং রয়েছে, যার পা কালো, পেটের চামড়া কালো এবং চোখ কালো। এ রকম একটি দুম্বা আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আয়েশা, আমাকে ছুরি দাও। আরো বললেন, একটি পাথরে ঘষে ধারালো করে দাও। তিনি ধারালো করে দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুম্বাটি মাটিতে শায়িত করলেন। এরপর বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করলেন এবং বললেন-‘ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৭, সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৯১৫; আবু দাউদ হাদীস ২৭৯২।


৭) অন্য হাদীসে এসেছে যে, কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়েছেন-


بِسْمِ اللهِ اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ، اَللّهُمَّ عَنْ مُحَمَّدٍ.

‘আল্লাহর নামে। ইয়া আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমার উদ্দেশ্যে। ইয়া আল্লাহ! হাম্মাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী হাদীস ১১৩২৯; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২১।

নবীজীর কথায়-‘ইয়া আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমারই উদ্দেশ্যে’ চিন্তা-ভাবনা করলে খুব সহজেই বোঝা যায়, কুরবানীর হাকীকত কী। আল্লাহ-প্রদত্ত রিযক এবং আল্লাহর নেয়ামত আমরা লাভ করেছি আর আল্লাহর হুকুমে তা কুরবানী রূপে তাঁর দরবারে পেশ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আবার আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেহমানদারী হিসেবে গ্রহণ করার দিক নির্দেশনাও পেয়েছি। অতএব পূর্ণ তাওহীদ ও ইখলাসের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ অনুযায়ী কুরবানী করা একান্ত কর্তব্য। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত কুরবানী করেছেন, কোনো বছর বাদ দেননি।

(আল ইসতিযকার, ইবনে আব্দিল বার ১৫/১৬৩-১৬৪) কখনো কখনো কুরবানী করার জন্য সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বণ্টন করেছেন। -সহীহ বুখারী হাদীস ৫৫৫৫


৮) হযরত আলী রাঃ কে রাসূলুল্লাহ আদেশ করেছেন যেন (ইন্তেকালের পরেও) তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়। তাই হযরত আলী রাঃ প্রতি বছর নিজের কুরবানীর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস ৮৪৩, ১২৭৮, আবু দাউদ হাদীস ২৭৮৭। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) থেকে আজ পর্যন্ত উম্মতের মধ্যে কুরবানী তাকওয়া স্বরূপ ইবাদত হিসেবে প্রকাশ্যে ও সম্মিলিতভাবে আদায়যোগ্য ইবাদত হিসেবে তা আদায় করা হচ্ছে। অতএব কেউ যদি মনে করেন, কুরবানী ইবাদত নয় এবং ইসলামী শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত নয় তবে সে যেন শরীয়তকে অস্বীকার করল।



কুরবানীর পশু কেনার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বিষয়ঃ


হাদিসের আলোকে কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হৃষ্টপুষ্ট, নিখুঁত ও উত্তম পশু কোরবানি করতেন এবং খুঁতবিশিষ্ট পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। খুঁতবিশিষ্ট যে সব প্রাণিতে কোরবানি বৈধ নয়- সুন্নাহর আলোকে ইসলামী স্কলারগণ তা নির্ধারণ করেছেন। নিম্নে খুঁতবিশিষ্ট পশুর বিবরণ প্রদান করা হলো-
  • যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে ভর দিতে পারে না এমন খোঁড়া পশুর কোরবানি জায়েজ নয়।
  • রুগ্ন ও দুর্বল প্রকৃতির পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না- এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুও কোরবানি জায়েজ নয়। তবে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে।
  • যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কোরবানি জায়েজ আছে। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই।
  • যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েজ আছে। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরূহ।
  • কোরবানির নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয়, যে কারণে কোরবানি জায়েজ হয় না- তাহলে ঐ পশুর কোরবানি সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কোরবানি করতে পারবেন।
  • নিশ্চিত অবগতি না থাকলে যদি বিক্রেতা কোরবানির পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার ওপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কোরবানি করা যাবে।


ঈদে কুরবানী করার সঠিক সময়ঃ


যাদের উপর জুম্মা ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করা জায়েজ নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজর থাকলে যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয় তাহলে ঈদের নামাজ আদায় পরিমাণ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরই কুরবানী করা জায়েজ আছে।


নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- 'যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পূর্বে কুরবানী পশু জবাই করবে সেটা তার নিজের জন্য সাধারণ জবাই হবে। আর যে নামাজ ও খুতবার পর জবাই করবে তার কুরবানী পূর্ণ হবে এবং সে-ই মুসলমানদের রীতি অনুসরণ করেছে।'


কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারেন তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে থাকে, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। তবে যদি সময়ের পরে জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পাবে তাও সদকা করতে হবে।



কুরবানীর অন্যান্য বিধানাবলিঃ

  • আকিকা আলাদা আদায় করা সুন্নত হলেও কোরবানির পশুতে আকিকার নিয়তে শরিক হওয়া যায়। এতে করে কুরবানী ও আকিকা দুটোই সহীহ হবে।
  • মৃতের ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ আছে। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে যায় তাহলে এর মাংস নিজেরা খেতে পারবে না। গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা হিসেবে দিয়ে দিতে হবে।
  • কুরবানী পশুর দেহাবসেস যেমন-হাড়, চর্বি, চামড়া ইত্যাদি বিক্রয় করা কুরবানীদাতার জন্য জায়েজ নয়। যদি বিক্রয় করে থাকে তাহলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
  • কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েজ নয়। কুরবানীর মাংস পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককেও দেয়া যাবে না। তবে, ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো অবশ্যই কাজের লোকদেরও মাংস খাওয়ানো যাবে।
  • কুরবানীর পশু জবাই করে পারিশ্রমিক হিসেবে আদান-প্রদান করা জায়েজ আছে। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দান অথবা গ্রহণ করা কোনটিই যাবে না।



প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শরীয়ত মোতাবেক কোরবানি কি এবং সঠিক সময়ে অর্থাৎ যথাযথ নিয়মে কুরবানীর কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪