দূরবর্তী হচ্ছে চাঁদ, ভবিষ্যতে ২৫ ঘণ্টায় দিন পরিবর্তনের আশঙ্কা
পৃথিবীর আয়ুষ্কাল যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, দিনে দিনে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনভাবে চাঁদের দূরত্ব সৃষ্টির কারণে পৃথিবীর মধ্যে দিনের ঘণ্টার পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যেখানে ২৪ ঘণ্টায় একদিন হয়, সেখানে ঘণ্টার হিসাবের তারতম্যের কারণে পরিবর্তিত হয়ে ২৫ ঘণ্টায় একদিন হচ্ছে এমনটিই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রিয় পাঠক, আপনাদেরকে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে দূরবর্তী হচ্ছে চাঁদ, ভবিষ্যতে ২৫ ঘণ্টায় দিন পরিবর্তনের আশঙ্কা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা প্রদান করার চেষ্টা করবো।
পৃথিবী সৃষ্টির আদ্যোপান্ত থেকে মানুষ তার সময় সম্পর্কে ধারণা পেতে অর্থাৎ সময় নিরূপণের জন্য দিন-রাত, সূর্য ও চাঁদের উপর নির্ভরশীল হয়ে, ছায়াকে কেন্দ্র করে সময় গননা করার চেষ্টা করতো। তাছাড়া অন্য কোন বিকল্প মাধ্যমও ছিল না। প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারণে সময় নিরুপনের জন্য ঘড়ি আবিষ্কার হয়। সূর্যের ছায়া ও চাঁদের হিসাব অনুযায়ী সময়ের হিসাব করতে হতো। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টাকে একদিন হিসাবে গণনা করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চাঁদ প্রতিনিয়তই দূরে সরে যাওয়াসহ মহাকর্ষীয় প্রভাবের ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান গতি কমতে শুরু করেছে। যার ফলে পৃথিবীর দৈনিক ঘন্টার পরিবর্তনের সংশয় দেখা দিয়েছে অর্থাৎ দিনের সময় বেড়ে যাচ্ছে। দিনের বৃদ্ধির হার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ বের করতে হয় বিধায় সাধারণভাবে এটিকে বোঝা যায় না। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদ যদি এভাবে প্রতিনিয়তই দূরে সড়তে থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর দৈনিক সময়ের হিসাবে ঘণ্টার পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে, চাঁদ ১৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর নিকটবর্তী থাকার কারণে পৃথিবীর দিনের সময় ১৮ ঘণ্টায় একদিন হতো বলে একসময় ধারণা করা হতো। পৃথিবী থেকে চাঁদ প্রতিনিয়তই দূরে সরে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান প্রক্রিয়ায় ধীরগতি দেখা দিয়েছে। যখনই চাঁদ পৃথিবীর দিকে আবর্তিত হয়, তখন এর মধ্যাকর্ষণ শক্তি সমুদ্রের জলের ওপর টান বা বল সৃষ্টি করে, যার কারণে কিছুটা হলেও পৃথিবীর ঘূর্ণন প্রক্রিয়ায় ধীরগতির সৃষ্টি করছে। পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে এমনভাবে বল প্রয়োগের ফলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী এর নিজস্ব অক্ষের ওপর চাঁদের কক্ষপথের তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে ঘুরে থাকে। যার কারণে, পৃথিবীর গতি দিনে দিনে ধীরগতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।
'' যুক্তরাষ্ট্রের সুনামধন্য বিজ্ঞানী স্টিফেন মেয়ার্স এর মতে, চাঁদ প্রতিবছর প্রায় দেড় ইঞ্চি দূরে সরে যাচ্ছে। যার অর্থ, আমাদের গ্রহের চারপাশ অতিক্রম করতে চাঁদের বেশি সময় লাগছে। চাঁদ দূরে সরে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতিও কমে যাচ্ছে। এমন এক সময় আসবে, যখন চাঁদ একটি স্থিতিশীল দূরত্বে পৌঁছে যাবে। তখন শুধু আমাদের গ্রহের এক দিক থেকে চাঁদ দেখা যাবে।''
আরও পড়ুনঃ বিশ্বায়নে এল নিনো সংকট কি? তা জানুন!!!
পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিদ কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতিতে ব্যপকভাবে প্রভাব পড়ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মেরু অঞ্চলের বরফ পূর্বের তুলনায় দ্রুতই গলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই সমুদ্রে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গলিত পানি ক্রমশই পৃথিবীর মেরু থেকে আস্তে আস্তে বিষুবরেখার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মহাসাগরের দিকে চাঁদের আকর্ষণ বেশি থাকার দরুন পৃথিবীর ঘূর্ণন প্রক্রিয়ায় আরও ধীরগতির হচ্ছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন প্রক্রিয়া যদি কোটি কোটি বছর চলতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিনের সময়ের পরিবর্তিত হয়ে এক ঘণ্টা অতিরিক্ত যোগ হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে মহাকাশে দূরবর্তী হচ্ছে চাঁদ, ভবিষ্যতে ২৫ ঘণ্টায় দিন পরিবর্তনের আশঙ্কা সম্পর্কে কিছুটা হলেও আগাম ধারণা পেলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url