যে খাবার রাতে খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
প্রবাদ আছে স্বাস্থ্য সকল সুখের মুল। কিন্তু আমরা কতটুকু স্বাস্থ্য সচেতন তা নির্ভর করে অনেকটা আমাদের খাদ্যাভাসের উপর। অর্থাৎ, আপনি যদি সঠিক নিয়ম মেনে খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে ভালো থাকাটা অনেকটাই সহজ হতে পারে। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে যে খাবার রাতে খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আমাদের মধ্যে অনেককেই প্রায় সময় দেখা যায় নিয়মিত শরীর চর্চার পাশাপাশি খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ডায়েট করার দিকে খুবই নজর দেই। তবে, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে শরীর চর্চার পাশাপাশি ডায়েট একান্ত প্রয়োজন। আবার কোন সময়ে খাবার খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সে সম্পর্কে নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক নছেত আপনার অনিয়মতান্ত্রিক খাদ্য গ্রহণে আপনাকে মৃত্যু ঝুঁকিতেও পড়তে হতে পারে। আপনি কি নিজের ওজন নিয়ে খুব চিন্তিত? কোন ভাবেই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। নিজেকে স্লিম ও ফিট রাখতে চাচ্ছেন? তাহলে অবশ্যই আপনাকে রাতের খাবার সম্পর্কে সর্বদাই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো দিনে খাবার হিসেবে উত্তম এবং কোনটি রাতের জন্য উত্তম। তবে চিকিৎসকদের মতে, রাত্রিকালে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার এড়িয়ে চলাটা উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক, রাত্রিতে যে খাবার খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তার কিছুটা ধারণা দিলাম যা আপনার দৈনন্দিন খাবার ম্যানুতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুনঃ মানবদেহে কুমড়ার বীজের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
যে খাবার রাতে খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
দই
যদিও দই অত্যন্ত পুষ্টিকর, তবে রাতে এটি খেলে গ্যাস ও শ্লেষ্মা তৈরি হতে পারে। রাতে দই খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে দই খেলে হজমের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়তে পারে।
- হজমের সমস্যা: রাতে দই খেলে অনেকের হজমে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে।
- সর্দি-কাশি: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, সূর্য ডোবার পর দই খেলে শরীরে মিউকাস জমতে পারে, যা সর্দি-কাশির সমস্যা বাড়াতে পারে।
- বাতের ব্যথা: যারা বাতের ব্যথায় ভুগছেন, তাদের জন্য রাতে দই খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।
- ঘুমের ব্যাঘাত: রাতে দই খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা মস্তিষ্কের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, যদি রাতে দই খেতেই হয়, তাহলে গোলমরিচ বা চিনি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া, দই ভাত বা লস্যি খাওয়া তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হতে পারে।
ফল
রাতে ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনেকসময় রাতে কিছু নির্দিষ্ট ফল খেলে হজমের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা এবং ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ফল রাতে এড়িয়ে চলা উচিত, যেমন_
- কলা: রাতে কলা খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
- তরমুজ: তরমুজে প্রচুর জল থাকে, যা রাতে খেলে ঠান্ডা লাগা, বদহজম এবং পেট ফাঁপার সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- আঙুর: আঙুরে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং বুকজ্বালা হতে পারে।
- কমলালেবু: এতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, যা অ্যাসিডিটি এবং পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
- শসা: শসাতে প্রচুর জল থাকে, যা ঘন ঘন প্রস্রাব এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- আম: রাতে আম খেলে পেট ভার হয়ে যেতে পারে এবং হজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তবে, যদি রাতে ফল খেতেই হয়, তাহলে হালকা ও সহজপাচ্য ফল যেমন-আপেল অথবা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কেন খেজুর সুপারফুড
মুরগির মাংস
মুরগিতে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে, যা হজম হতে বেশি সময় লাগে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। রাতে মুরগির মাংস খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য শারীরিক সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে বা ভাজা-মশলাদারভাবে খাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে মুরগির মাংস খেলে হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
- হজমের সমস্যা: রাতে মুরগির মাংস খেলে অনেকের অ্যাসিডিটি বা বুকজ্বালা হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: নিয়মিত মুরগির মাংস খেলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি ভাজা বা মশলাদার হয়।
- কোলেস্টেরল বৃদ্ধি: অতিরিক্ত মুরগির মাংস খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: মুরগির মাংস একটি উচ্চতাপযুক্ত খাদ্য, যা শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে এবং গরমের সময় অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
- মূত্রনালী সংক্রমণের ঝুঁকি: নিম্নমানের মুরগির মাংস খেলে ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা মূত্রনালী সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
তবে, যদি রাতে মুরগির মাংস খেতেই হয়, তাহলে গ্রিলড বা সেদ্ধ মুরগির মাংস খাওয়া তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কি প্রকৃতির খাবার খাবেন
চর্বিযুক্ত খাবার
রাতে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের উপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- হজমের সমস্যা: চর্বিযুক্ত খাবার পাচন প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যার ফলে পেট ফোলা, গ্যাস, এবং অস্বস্তি হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ট্রান্স ফ্যাট থাকার কারণে চর্বিযুক্ত খাবার ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি: নিয়মিত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা: ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে, যদি রাতে চর্বিযুক্ত খাবার খেতেই হয়, তাহলে গ্রিলড, বেকড বা স্টিমড খাবার বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে।
ব্রকলি ও ফুলকপি
ব্রকলি ও ফুলকপিতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, যা রাতে খেলে পেট ফাঁপা ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রাতে ব্রকলি ও ফুলকপি খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য শারীরিক সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়। যেমন_
- গ্যাস ও পেট ফাঁপা: ব্রকলি ও ফুলকপিতে ফাইবার ও সালফার থাকে, যা রাতে খেলে গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- হজমের সমস্যা: এগুলো ক্রুসিফেরাস সবজি, যা হজম হতে সময় নেয়। রাতে খেলে অ্যাসিডিটি ও বদহজম হতে পারে।
- ঘুমের ব্যাঘাত: অতিরিক্ত ফাইবার থাকার কারণে রাতে ব্রকলি ও ফুলকপি খেলে পেট ভার লাগতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- থাইরয়েডের সমস্যা: ফুলকপি ও ব্রকলি গয়ট্রোজেনিক সবজি, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে যদি কাঁচা খাওয়া হয়।
তবে, যদি রাতে ব্রকলি ও ফুলকপি খেতেই হয়, তাহলে সেদ্ধ বা হালকা ভাজা করে খাওয়া ভালো হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গ্রীষ্মকালে ঠোঁট ফাটলে আছে সমাধান
চিনিযুক্ত খাবার
কেক, কুকিজ এবং চকোলেটের মতো চিনিযুক্ত খাবার সন্ধ্যা ৬টার পরে একেবারেই নিষিদ্ধ। ক্যালোরি বেশি হওয়ায় এগুলো পেটে চর্বি জমাতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এই পরিবর্তনটি প্রাথমিকভাবে কিছুটা কঠিন হতে পারে, তবে এর কার্যকারিতা দ্রুতই টের পাবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত চিনি শরীরের উপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন_
- ওজন বৃদ্ধি: চিনিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করে, যা স্থূলতা বাড়াতে পারে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত চিনি খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
- হৃদরোগের সম্ভাবনা: চিনি বেশি খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি: উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ বাড়তে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: চিনি ত্বকের তৈলাক্তভাব বাড়ায় এবং ব্রণের কারণ হতে পারে।
- শক্তির ওঠানামা: চিনি খেলে শরীর তা দ্রুত শক্তিতে রূপান্তর করে, কিন্তু এর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী, ফলে কিছুক্ষণ পর ক্লান্তি অনুভূত হয়।
তবে, যদি রাতে মিষ্টি খেতেই হয়, তাহলে প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন মধু বা ফল বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে।
ভারী প্রোটিনযুক্ত
পুষ্টিবিদরা রাতে ভারী প্রোটিন এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেন। প্রোটিন স্বাস্থ্যকর হলেও, লাল মাংস এবং তরকারির মতো ভারী খাবার হজম করা কঠিন হতে পারে, যা ঘুমের সময় পেটের সমস্যা তৈরি করে। মুরগির বুকের মাংস বা ডিমের মতো হালকা প্রোটিন খান। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীরে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে। যেমন_
- হজমের সমস্যা: অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যদি কম ফাইবারযুক্ত খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়।
- কিডনির উপর চাপ: শরীর অতিরিক্ত প্রোটিন প্রসেস করতে গেলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: প্রোটিন বেশি খেলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করে, যা চর্বি হিসেবে জমা হতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
- নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে কিটোসিস হতে পারে, যা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমানো: কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কে শক্তির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা মাথা ঘোরা ও মনোযোগের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তবে, যদি রাতে ভারী প্রোটিন খেতেই হয়, তাহলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ফাইবারযুক্ত খাবারের সঙ্গে খাওয়া ভালো হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পুষ্টি গুণে বেল ফল
কার্বনেটেড পানীয়
আমরা সবাই জানি যে কার্বনেটেড পানীয় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কখনই ভালো নয়। পেটের মেদ দূর করতে চাইলে এগুলো সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে, বিশেষ করে সন্ধ্যা ৬টার পরে। এর মধ্যে রয়েছে সোডা, বিয়ার এবং স্পার্কলিং ওয়াটার, যা গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং চর্বি বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পানীয়গুলিতে থাকা চিনি, ফসফরিক অ্যাসিড এবং ক্যাফেইন শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন_
- হজমের সমস্যা: কার্বনেটেড পানীয়ে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড পেটে গ্যাস ও ফোলাভাব তৈরি করতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: উচ্চ চিনি ও ক্যালোরি থাকার কারণে নিয়মিত পান করলে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- হাড়ের ক্ষতি: এতে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, যা অস্টিওপোরোসিসের কারণ হতে পারে।
- ডিহাইড্রেশন: যদিও এটি তৃষ্ণা নিবারণ করে মনে হয়, কিন্তু আসলে ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দিতে পারে।
- দাঁতের সমস্যা: এতে থাকা অ্যাসিড ও চিনি দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটি তৈরি করতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: অতিরিক্ত চিনি ত্বকের বার্ধক্য বাড়াতে পারে এবং ব্রণের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তবে, যদি রাতে পানীয় খেতেই হয়, তাহলে ডাবের পানি, লেবুপানি বা হারবাল চা বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবার
সন্ধ্যা ৬টার পরে দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। দুগ্ধজাত খাবার পেটের জন্য বেশ ভারী এবং এর ফলে পেট ফুলে যাওয়া এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। দুধ, পনির, দই এবং ক্রিম এড়িয়ে চলুন এবং দিনের বেলায় এগুলো খেতে বাধা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু দুগ্ধজাত খাবার রাতে এড়িয়ে চলা উচিত, যেমন_
- অ্যাসিডিটি ও বুকজ্বালা: দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার রাতে খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে, যা বুকজ্বালা ও বদহজম সৃষ্টি করতে পারে।
- ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা: যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে, তাদের জন্য রাতে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হতে পারে।
- ঘুমের ব্যাঘাত: কিছু দুগ্ধজাত খাবারে ট্রিপটোফ্যান থাকলেও, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেলে ক্যালোরি গ্রহণ বেড়ে যায়, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: দুগ্ধজাত খাবার ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যাদের সংবেদনশীল ত্বক রয়েছে।
তবে, যদি রাতে দুগ্ধজাত খাবার খেতেই হয়, তাহলে গরম দুধ বা কম চর্বিযুক্ত দই খাওয়া তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পেঁপের সঙ্গে কি খেলে রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকি
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাবার
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলতে হবে। আপনি সাদা ভাত প্রেমী, পাস্তা প্রেমী অথবা রুটি প্রেমী যাই হোন না কেন, রাতের খাবারে এগুলো রাখা বন্ধ করুন। এগুলো খাওয়ার ফলে ইনসুলিনের স্পাইক এবং পেটের চর্বি বেড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণ করলে চর্বি হিসেবে জমা হতে পারে।
- রক্তে শর্করার ওঠানামা: রাতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে এবং কমে, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- হজমের সমস্যা: এতে ফাইবার কম থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজম হতে পারে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: নিয়মিত পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
- হৃদরোগের সম্ভাবনা: উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে, যদি রাতে কার্বোহাইড্রেট খেতেই হয়, তাহলে পুরো শস্যজাতীয় খাবার যেমন-লাল চাল, ওটস বা মিষ্টি আলু বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে।
ডিপ-ফ্রাইড খাবার
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পাকোড়া, পুরি এবং সমুচার মতো ডিপ-ফ্রাইড খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খাবারগুলোতে ক্যালোরি বেশি থাকে এবং বিপাক প্রক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত তেল শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন_
- হজমের সমস্যা: ডিপ-ফ্রাইড খাবার পাচন প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যার ফলে পেট ফোলা, গ্যাস এবং অস্বস্তি হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ট্রান্স ফ্যাট থাকার কারণে নিয়মিত খেলে স্থূলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি: নিয়মিত ডিপ-ফ্রাইড খাবার খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়।
- ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা: ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ঘুমের ব্যাঘাত: অতিরিক্ত তেল ও মশলা থাকার কারণে রাতে ডিপ-ফ্রাইড খাবার খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তবে, যদি রাতে ভাজা খাবার খেতেই হয়, তাহলে গ্রিলড, বেকড বা স্টিমড খাবার বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে যে খাবার রাতে খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সে সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেলাম। আজকের আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আমরা আপনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি একইসাথে ভবিষ্যতেও এমন আরও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আজকের মতো বিদায় নিলাম।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url