বিট কি শুধুই রস, নাকি দেহের শক্তির এক অপরন্তু উৎস
বিট কি শুধুই রস, নাকি দেহের শক্তির এক অপরন্তু উৎস। প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানতে চাচ্ছেন বিট রস কি? এবং মানবদেহে জন্য এটি কিভাবে শক্তির সঞ্চয় করে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে বিটরুটের অনবদ্য রস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই, আশ্চর্য এই বিটরুট রস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃমহান সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমার অংশ হিসেবে মানুষের কল্যানের জন্য বিভিন্ন প্রকারের স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে বিটরুট (Beetroot) অন্যতম। বিশেষ করে প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত অনেক উপকারী স্বাস্থ্যকর খাদ্য রয়েছে যা আমাদের জীবন ধারণের জন্য স্বাস্থ্যকর উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে, বিটরুট রস তার কোন অংশে কম নয়, এক কথায় একে আমরা সুপার ফুড হিসেবেও আখ্যায়িত করতে পারি। বিটের রসে রয়েছে_
ড. ফারাহ রউফ, নিউরোসায়েন্টিস্ট এর মতামত_“আমাদের ব্রেইন ডায়েটের ওপর নির্ভরশীল। বিটের রসে এমন একটি উপাদান থাকে যা অক্সিজেন প্রবাহকে বাড়িয়ে নিউরোনকে সক্রিয় করে তোলে।”
- নাইট্রেট (Nitrates)– যা রক্তনালী প্রসারিত করে
- বেটালেইন (Betalain)– একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন C
- আয়রন ও পটাশিয়াম
- অল্প পরিমাণে চিনি (Glucose)
আরও পড়ুনঃ দেশীয় কোন মাছে ওমেগা ৩ বেশি থাকে জানুন
নিম্নে আপনাদের জন্য বিট রস এর নানাবিদ উপকারিতা সম্পর্কে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই বিট রস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে শুরুতেই জেনে নিন, মানবদেহের জন্য বিট রসের পাঁচটি গুনাগুন কেমন হয়:-
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিট রস;
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিট রস;
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বিট রস;
- হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিট রস;
- ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিট রস;
দৈনিক এক গ্লাস বিট রস আপনি যদি নিয়মিত পান করতে পারেন, তাহলে এর মধ্যে রয়েছে নানাবিদ স্বাস্থ্য উপকারিতা। বিট রসের স্বাস্থ্যকর পাঁচটি গুনাগুন জানার পর এইবার চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেই। প্রথমেই জানবো বিট রস কিভাবে আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ক) হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিট রসঃ
বিট রস (Beetroot juice) হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে একটি সহজ, প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপাদান হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিট রসের বিদ্যমান নাইট্রেট (Nitrate) যা আমাদের শরীরে এক পর্যায়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। যার ফলে মানবদেহের রক্তনালীগুলো প্রসারিত হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রক্তচাপ কমাতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর পরে জানবো বিটরস কিভাবে মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
খ) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিট রসঃ
বিট রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, নিয়মিত বিট রস পান করার মাধ্যমে সিস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপ ক্রমশই কমে আসে। বিটে এক প্রকার উচ্চমাত্রার নাইট্রেট বিদ্যমান থাকে যা আমাদের শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রিক অক্সাইড মানবদেহের রক্তনালিগুলোকে প্রসারিত করে থাকে। ফলে রক্ত চলাচল সহজ হয় এবং রক্তচাপ দ্রুতই কমতে থাকে। অর্থাৎ, যারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা চাইলে এটি পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে পারেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, একজন ব্যক্তি যদি একটানা ৭ দিন দিন ধরে দৈনিক ২৫০ মি. গ্রা. বিট রস খায় তাহলে সিস্টোলিক রক্তচাপ ঔষধ খেলে যে পরিমাণ কমে তা থেকে ৫ mmHg পরিমাণ কমে থাকে। এই জানবো, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বিট রসের অনবদ্য সমধান কি হতে পারে।
গ) মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বিট রসঃ
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও বিট রসের বিশেষত্ব রয়েছে। বিটের রসের মধ্যে যে নাইট্রেট রয়েছে তা আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নাইট্রেট যেমন মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে পাশাপাশি বুদ্ধিদৃপ্ত স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকরণেও বেশ কার্যকরী। গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে যে, আপনি যদি নিয়মিত বিটরুট রসের পানি পান করেন, তবে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি অথবা স্মৃতি ভ্রমের আশঙ্কা থেকেও পরিত্রান পেতে পারেন। এর বিশেষত্ব আরও হোল এর মধ্যে অন্তর্নিহিত নাইট্রেটগুলির কারণে মস্তিষ্কে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিগণিত হয়, যা প্রবাহিত রক্তনালীকে শিথিল করে। চিন্তা করা মানে মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক সংকেত আদান-প্রদান। আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন, যেগুলো প্রতিনিয়ত ইলেকট্রিক তরঙ্গ ও নিউরোট্রান্সমিটারের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করছে।
University of Exeter (UK) ২০১০ সালে তারা প্রমাণ করে, বিটের রস পানকারীদের দৃঢ় মানসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় কম লাগে। তাদের নিউরোইমেজিং দেখায়, মস্তিষ্কের “prefrontal cortex”–এ রক্তপ্রবাহ বাড়ে।
এর পরে চলুন জেনে নেই, কিভাবে বিটের রস আমাদের হজমক্ষমতাকে উন্নত করে থাকে।
ঘ) হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিট রসঃ
বিটের রস হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। বিটের মধ্যে উপস্থিত ফাইবার যা আমাদের হজমক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও বিশেষভাবে কার্যকারী। অর্থাৎ, আপনি যদি আপনার হজম ক্ষমতাকে উন্নত করতে চান বা শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বদ্ধ পরিকর তাহলে আর দেরী না করে বাজার থেকে বিট কিনুন এবং বিটের রস সেবন করে দেখতে পারেন। তবে, বিট রস শুধু যে রঙের দিক থেকে নয়, গুণে মানেও খুবই অসাধারণ। আবার হজমক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিট রসের কিছু বিজ্ঞানসম্মত কারণও রয়েছে নিম্নে তা তুলে ধরা হলঃ-
হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিট রসের বিজ্ঞানসম্মত কারণ
- বেটাইন এনজাইমঃ বিটের এই উপাদান মূলত আমাদের লিভারকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে থাকে। লিভারের পাচনতন্ত্রকে মোটামটি শক্তিশালী করে ও হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে যায়।
- অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিঃ বিটের রসে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। হজম প্রক্রিয়ায় আনে নতুন মাত্রা।
- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ বিটের রসে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিশেষ করে আমাদের লিভারকে চাঙ্গা রাখে, যা হজম প্রক্রিয়ার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
- বিটের ফাইবারঃ বিটের ফাইবারে থাকা দ্রবণীয় বা অদ্রবণীয় ফাইবার লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এবং শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ঙ) ত্বকের সৌন্দর্যে বিটের রসঃ
নিজেকে সুন্দর রাখতে কে না পছন্দ করেন। তার জন্য আপনি কতই না চেষ্টা করে থাকেন এবং সময় সময়ে প্রচুর অর্থও নষ্ট করেছেন। কিন্তু এতো চেষ্টার পরও যখন কোন আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় না তখন অনেকটাই ভেঙ্গে পড়তে হয়। কিন্তু প্রসাধনীর বাহিরে প্রাকৃতিক উপায় যদি হয় সৌন্দর্য বৃদ্ধির রহস্য তাহলে কেমন হয় ভাবুনতো। বিটের রস মূলত সে রকমই একটি পদ্ধতি। এটি মূলত শরীরের ভেতর থেকে আপনার ত্বককে পরিষ্কার করে। বিটের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে ক্ষতিকারক র্যাডিক্যাল থেকে বিশেষভাবে রক্ষা করে ফলে ত্বক হয় প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল। নিয়মিত বিটের রস খেলে ত্বকের কিছু উপকারিতাও রয়েছে যেমন- ব্রণ ও দাগ দূরীকরণে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বক থেকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করে। এতক্ষণ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিটের রস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। এবার জানবো চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এটি কেমন কাজ করে থাকে।
চ) চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিট রসঃ
ছ) মানব দেহের লিভার পরিষ্কারেও বিট রস
মানবদেহের লিভার পরিষ্কারের ক্ষেত্রেও বিট রসের নানাবিদ গুনাগুন রয়েছে। তবে, শুধু লিভারকে নয়, শরীরের জন্যও একটি শক্তিশালী ডিটক্স পানীয় হিসেবে বিট রস যুগান্তকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ, বিট রসকে অনেকে মনে করেন এটি মানবদেহের লিভারের জন্য একপ্রকার টনিক হিসেবে কাজ করে। চিকিৎসকের ধারণা, বিট রসে বেটাইন নামক একটি যৌগ থাকে যা লিভারের জমে থাকা টক্সিন দূরীকরণে বিশেষভাবে কাজ করে এবং লিভারের জমে থাকা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। এটি লিভারের এনজাইম অ্যাকটিভিটিও বৃদ্ধি করে থাকে। বিট রসের উপকারিতা বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়, বিশেষ করে বিট রস আপনি যদি নিয়মিত খান তবে আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত হবে, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে এবং পিত্ত নিঃসরণও বাড়িয়ে দেয় যার কারণে চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন হজমেও সহায়ক।
জ) রক্তশূন্যতা (এনিমিয়া) দূর করে বিটের রস
রক্তশূন্যতা (এনিমিয়া) ছোট বাচ্চাদের বা বড়দের অথবা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য এখন একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বিটের রস হতে পারে আপনার জন্য সহজ সমাধান। বিট রসে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যেমন-আয়রন, ফোলেট ও ভিটামিন-সি যা আমাদের শরীরকে প্রাণবন্ত করার পাশাপাশি রক্তশূন্যতা দূর করতে খুবই কার্যকরী।
- আয়রনঃ বিটে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন, যা হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অপরিহার্য। আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, তাই বিট রস নিয়মিত পান করলে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হয়;
- ফোলেটঃ এটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিটে থাকা ফোলেট রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং নতুন রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে;
- ভিটামিন-সিঃবিটে থাকা ভিটামিন C আয়রনের শোষণ বাড়ায়, ফলে শরীর আয়রন ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে আয়রনের শোষণ বাড়ায়;
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটালাইনসঃ রক্তের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং কোষের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
বিশেষ করে, গর্ভবতী ও স্তন্য প্রদানকারী নারীদের, নারীদের মাসিককালীন সময়ে এবং শিশুদের বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য উপকারী। তবে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত বিট রস পান না করাই ভালো।
ঝ) ব্যায়ামক্ষমতা ও স্ট্যামিনা বাড়ায় বিট রসে
ব্যায়ামক্ষমতা ও স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে বিট রসের দারুন কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। বিটে থাকা নাইট্রেট শুধু রক্তচাপই নয়, অক্সিজেনের কার্যকারিতাও বাড়িয়ে দেয়। মাংসপেশিতে যখন অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়তে থাকে তখন স্ট্যামিনা বেরে যেতে থাকে। এইভাবে স্ট্যামিনা শরীরে যখন বারতে থাকে তখন শরীরে এক ধরণের সহ্যশক্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা শরীর চর্চার আগে নিয়মিত বিট রস পান করেন, তারা অন্যান্যদের চাইতে আনুমানিক ১৬ শতাঙ্কশ বেশি সময় ব্যায়াম চালিয়ে যেতে সক্ষম। অর্থাৎ, বিটের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানবদেহের মাংসপেশির ক্লান্তি দূর করে ও ইনজুরিও দ্রুত সারিয়ে তুলতে সক্ষম। যার ফলে ব্যায়ামের পর ক্লান্তি দূর করতে বিট রস খুবই কার্যকরী।
ঙ) নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন বৃদ্ধি
মানবদেহের শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনেও বিট রস যথেষ্ট কার্যকরী। বিশেষ করে বিটে থাকা বিটালাইনস এর কারণে মস্তিস্কে নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন ও সেরোটোনিন এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বিটের রসে থাকা কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ ফলপ্রসূ। এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত ৭দিন যাবৎ বিট রস খাওয়ার পর একজন মানুষের সাবজেক্টিভ ওয়েলবিয়িং স্কোর বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
আরও পড়ুনঃ চাইনিজ AI এক বিস্ময়কর চমক
নিম্নে মানবদেহের শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিট রস কি অবদান রাখতে সক্ষম হয় সে বিষয়ে তুলে ধরা হল।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটালাইনসঃ এই উপাদানটি মস্তিস্কের স্নায়বিক কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ, নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- বিষণ্ণতা কমাতেঃ বিষণ্ণতা কমাতেও বিট রস সহায়তা করে থাকে। বিটেইন মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন-এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা মন ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- নাইট্রেটসঃ বিট রসে পর্যাপ্ত পরিমাণে নাইট্রেটস থাকে। যা আমাদের মানবদেহের রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে। যার কারণে মস্তিস্কের নিউরোট্রান্সমিটার কার্যক্রমেকে শ্রীবৃদ্ধি করে। নাইট্রেটস এর কারণে মস্তিস্কের রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়।
- ট্রিপটোফ্যানঃ বিটে পরিমাণমত ট্রিপটোফ্যান জাতীয় উপাদান থাকে। এটি মেজাজ উন্নত রাখতে বিশেষভাবে সহায়ক।
বিটের রসের শরবত বানানোর অভিনব পদ্ধতি
১। তৈরির উপকরণঃ
- ১টি মাঝারি বিট;
- আধা কাপ পানি;
- ১ চামচ লেবুর রস;
- ১ চিমটি গোলমরিচ;
২। প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে বিটগুলোকে ভাল করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং ছোট ছোট কেটে টুকরো করুন। এরপর ব্লেন্ডারে একটু পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা বিট ছাকনির সাহায্যে ছেঁকে নিন। তারপর বিটের রসের সাথে একটু লেবুর রস ও গোলমরিচ মিশিয়ে পান করুন। ব্যাস হয়ে গেল ঝটপট বিটের রসের রেসিপি।
বিট রস খাওয়ার সঠিক সময়
- প্রতিদিন ১ কাপ (২৫০-৩০০ মিলি) করে বিটের রস খাওয়া যেতে পারে;
- সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়;
সাবধানতাঃ
- বিটের রস খাওয়ার দরুন আপনার প্রস্রাব ও মল গোলাপি বা লালচে হতে পারে — যা স্বাভাবিক।
- অতিরিক্ত বিট রস পান করলে অনেক সময় কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে, তাই পরিমাণ মত পান করুন।
- যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত বিট রস পান না করাই শ্রেয়।
- খালি পেটে বিটের রস খাওয়া উত্তম।
- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হালকা করে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
- অতিরিক্ত পান না করাই ভালো, কারণ এতে অক্সালেট এর পরিমান বেশি থাকে। কিডনিতে যদি পাথর সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই এক্ষেত্রে সাবধান হওয়া উচিত।
শেষ কথা
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং বিট কি শুধুই রস, নাকি দেহের শক্তির এক অপরন্তু উৎস সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটিতে মানবদেহের জন্য বিট রসের নানাবিদ গুনাগুন, তৈরির উপকরণ, বিটের রসের শরবত বানানোর অভিনব পদ্ধতি, বিট রস খাওয়ার সঠিক সময় ও বিট রস পান করলে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, এই সকল তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। তাই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেশি বেশি জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করবেন, ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url