লিভার সুস্থ রাখার কৌশল, সঠিক পরিচর্যার অভাবে কি হতে পারে
মহান সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি মানব সৃষ্টি। এই মানব সৃষ্টির আদ্যপান্ত থেকে মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গপতঙ্গ আমাদের শরীরের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। তন্মধ্যে লিভার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আপনাকে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো কিভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভাল রাখা যায়, সুস্থ রাখার কৌশল এবং সঠিক পরিচর্যার অভাবে কি হতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্রঃমানবদেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে বৃহৎ একটি অঙ্গ হল লিভার। যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমরা মূলত খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তার সকল কিছুই পরিপাকতন্ত্র হয়ে রক্তের মাধ্যমে যকৃত অর্থাৎ লিভারে যেয়ে পৌঁছে। লিভার পরবর্তীতে রক্তের পুষ্টি উপাদানগুলো ভেঙে শরীরে এনার্জি বা শক্তি উৎপাদন করে এবং বাড়তি পুষ্টি উপাদানগুলো গ্লুকোজ আকারে সঞ্চিত করে রাখে। তাছাড়া, লিভার যেমন পিত্ত তৈরি করে এবং অন্যদিকে খাবারের তৈলাক্ত চর্বি ভাঙতেও সহায়তা করে থাকে। আবার মানবদেহের উপকারে আসে এমন অনেক মুল্যবান প্রোটিন এবং রক্তের উপাদান লিভারে তৈরি হয়।
লিভার কিভাবে সুস্থ রাখা যায়?
লিভার কিভাবে সুস্থ রাখবেন তার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতে অনেক বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। তবে, আপনি যদি লিভারের ফ্যাট দ্রুত কমাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ওজন কমানোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বিশেষ করে যেসকল খাবারে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্যালরি, যেমন-সাদা পাউরুটি, পাস্তা, চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার, পরিশোধনকৃত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ও স্যাচুরেটেড জাতীয় ফ্যাটি খাবার তা পরিহার করতে হবে। এ জাতীয় খাবার দীর্ঘদিন গ্রহণের ফলে আপনার লিভার ফ্যাটি লিভারে পরিণত হওয়ার আশঙ্খা দেখা দিতে পারে। লিভার কিভাবে সুস্থ রাখা যায়? নিম্নোক্তভাবে কিছু কারণ আপনাদের জন্য তুলে ধরা হল।
ক) নিয়মিত ব্যায়াম, কায়িক পরিশ্রম, নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাবাস ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন ব্যবস্থাই আপনার লিভার সুস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে প্রধান পাথেয় হতে পারে। প্রথমেই আপনাকে দিনের শুরুতেই কিছু না কিছু শরীরচর্চা বা ঘাম ঝড়ানোর পরিশ্রম দিয়েই নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। লিভার ভালো থাকবে।
খ) খাবার রান্না করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সিদ্ধ করে নিতে হবে। মনে রাখবেন কাঁচা বা আধা সেদ্ধ খাবার আপনার লিভারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিসাধন করে। তাই, খাবার রান্না করলে আপনাকে অবশ্যই সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত জরুরি।
গ) লিভার ভালো রাখতে হলে আপনাকে দৈনন্দিন খাবারের মেন্যুতে অবশ্যই ফ্রেশ অর্থাৎ টাটকা শাক-সবজি ও ফল-ফলাদি রাখার চেষ্টা করাটা একান্ত জরুরি। বিশেষ করে মশলার মধ্যে রসুন ও হলুদ লিভারের জন্য বেশ উপকারী। ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার যেমন-লেবু, বাতাবিলেবু, গাজর, গ্রিন টি, অ্যাভোকাডো, আপেল, অলিভ অয়েল, লেবু, বাঁধাকপি ও লিভারের জন্য বেশ উপকারী।
ঘ) চিকিৎসকদের মতে, টক্সিন লিভারের আস্তরকে অর্থাৎ কোষকে ধ্বংস করে। এক্ষেত্রে আপনার উচিৎ ফ্যাট জাতীয় খাদ্য, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ক্যামিকেল মিশ্রিত এলকোহল বা এনার্জি ড্রিংকস পরিহার করা। আবার অতিরিক্ত গন্ধ জাতীয় স্প্রেও আপনার শরীরের জন্য যেমন অত্যধিক ক্ষতিকারক তেমনি আবার লিভার খারাপ করার ক্ষেত্রেও অত্যধিক কার্যকরী। তাই, লিভার ভালো রাখতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ক্যামিকেল জাতীয় খাবার, ফ্যাটি বা তৈলাক্ত জাতীয় খাবার এবং মশা নিধনের জন্য স্প্রে করার ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করাটাই অত্যন্ত শ্রেয়। আপনার লিভার যদি ভাল রাখতে চান তবে যেনতেন ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত ওষুধ সেবন থেকেও বিরত থাকতে হবে।
ঙ) লিভার ভাল রাখতে হলে আপনার পরিস্কার থাকাটা বিশেষভাবে জরুরি। বিশেষ করে ঘরের বাহিরে গেলে নিজের ব্যবহৃত সকল কিছুই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। জার্নিতে নিজের সেভিং ক্রিম, রেজার, ব্যবহৃত ব্রাশ ও নক কাটার সামগ্রি অন্যের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য হেপাটাইটিস এ, বি টিকা শরীরে নিতে পারেন, যা আপনাকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে।
সুস্থ লিভারের প্রকৃত খাবার কেমন হতে পারে
আমাদের শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লিভার। যা প্রতিনিয়তই ভালো রাখতে হলে কত প্রকার নিয়ম-প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যে চলতে হয় তা লেখে শেষ করা যাবে না। আজকে আপনাদেরকে সুস্থ্য লিভারের প্রকৃত খাবার সম্পর্কে ধারণা দিতে চেষ্টা করবো। নিম্নে আইটেম আকারে আপনাদের দেখানো হল।
১) স্বাস্থ্যকর শাক-সবজি
এখন শীতকাল। বাজারে উঠেছে হরেক রকমের শাক-সবজি। শাকের মধ্যে রয়েছে লাল শাক, পাতাযুক্ত সবুজ শাক, কল্মি শাক, পালং শাক। এদের মধ্যে লাল শাক আমাদের শরীরে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পূরণ করে থাকে। আর পাতাযুক্ত সবুজ শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লোরোফিল যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশনের কাজকে সহায়তা করে। আবার এই প্রকৃতির সবুজ শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারের কার্যকারিতাকে সুদৃঢ় করে। সবজির মধ্যে ফুলকপি, ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে বলে জানা গেছে, যা শরীর থেকে অবাঞ্ছিত বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। তদুপরি, এগুলিতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং লিভারের রোগের ঝুঁকি কমায়।
আরও পড়ুনঃ চোখের যত্নে ৫টি কার্যকরী টিপস
২) তৈলাক্ত মাছ
তৈলাক্ত মাছ বলতে আমরা সাধারণত বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক স্বাদযুক্ত মাছকে বুঝে থাকি। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে এমন কিছু মাছ রয়েছে যার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। ওমেগা-৩ জাতীয় মাছগুলি আমাদের শরীরের অঙ্গের মধ্যে বিশেষ করে লিভার ভাল রাখতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আর এই ওমেগা-৩ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে বিশেষ করে ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ যেমন-ম্যাকেরেল, স্যামন ও সার্ডিনের মতো তৈলাক্ত মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান থাকে। ওমেগা-৩ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি আপনার লিভারের প্রদাহ প্রতিরোধে ও লিভারের দীর্ঘদিনের জমতে থাকা চর্বি দ্রুত অপসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যার কারণে লিভারের এনজাইমের মাত্রা দ্রুত উন্নত করে, যা লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩) যেকোন বাদাম
লিভার সুস্থ রাখাতে আপনি যেকোনো বাদাম খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। বাদাম বিশেষকরে লিভারের দীর্ঘদিনের জমে থাকা চর্বি কাটতে সহায়তা করে থাকে। বাদামে মূলত ভিটামিন-ই ও ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স রয়েছে, যা আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার, আয়রন, জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে এবং ভিটামিন-ই এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে।
৪) অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল হল মূলত জলপাই তেল যা জলপাই ফল থেকে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। অলিভ অয়েল হল একপ্রকার স্বাস্থ্যকর ভোজ্য তেল, যা আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ত্বকের যত্ন নিতে, চুলের পরিচর্যা করতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলকে একটি উপকারী চর্বি হিসেবেও গন্য করা হয়। অলিভ অয়েলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার লিভারের চর্বি জমা কমিয়ে লিভারের কার্যকারিতাকে উন্নত করতে সহায়তা করে থাকে। প্রাকৃতিক মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ এই তেলের মধ্যে কোন প্রকার ভেজাল নেই বিধায় এটি রান্নার ক্ষেত্রে, সালাদ ও সৌন্দর্যচর্চায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতে দেখা যায়।
৫) লিভার ভাল রাখতে হলুদের ব্যবহার
হলুদের শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। হলুদ কেবল প্রদাহ কমায় না বরং পিত্তের উৎপাদনকেও উদ্দীপিত করে, যা হজম এবং লিভারের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পদার্থ।
আরও পড়ুনঃ যে খাবার রাতে খেলে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
৬) লিভার ভাল রাখতে রসুনের ব্যবহার
রসুনে সেলেনিয়াম থাকে, যা লিভারের এনজাইমগুলিকে সক্রিয় করে টক্সিন দূর করে। এর উপাদানগুলিতে সেলেনিয়ামও থাকে, যা লিভারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
৭) লিভার ভাল রাখতে বেরি খাদ্য
লিভার ভাল রাখতে হলে আপনি বেরিকে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। বেরি হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রধানত উৎস। বেরির তালিকায় রয়েছে ব্লুবেরি, রাস্পবেরি ও ক্র্যানবেরি। বেরি লিভারের প্রদাহ কমাতে ও লিভারের এনজাইমের কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করাসহ লিভারকে মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
লিভারকে ভাল রাখতে হলে আপনাকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই এমন কিছু খাবার রয়েছে যা পরিহার করতে হবে। নিম্নে কিছু খাবারের নামসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
হানিকর তেলে ভাজা খাবার
তেলে ভাজা খাবার আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু হানিকর তা আপনার হয়তোবা অজানা। বিশেষ করে, তেলেভাজা খাবারের যে পরিমাণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক চর্বি থাকে সেগুলো লিভারে চর্বি জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে ফ্যাটি লিভার রোগের মতো পরিস্থিতি দেখা দেয়। সময়ের সাথে সাথে, খাবারগুলো লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রদাহ বাড়ায়।
চিনি মিশ্রিত খাদ্য
যেসব খাবারে উচ্চ মাত্রার মিষ্টি থাকে, যেমন ক্যান্ডি, বেকারি পণ্য এবং কার্বনেটেড পানীয়, সেগুলো দ্রুত হজম হয় এবং লিভারে চর্বি জমার দিকে পরিচালিত করে। ভারত এবং বিশ্বব্যাপী NAFLD-এর প্রাদুর্ভাব একটি প্রধান কারণ।
আরও পড়ুনঃ চিয়া সিড প্রতিদিন খেলে কি হয়
এলকোহল মিশ্রিত খাদ্য বা পানীয়
বিশেষকরে লিভারের প্রথম ও প্রধানত ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অ্যালকোহল মিশ্রিত খাদ্য বা পানীয়। অতিমাত্রায় অ্যালকোহলিক জাতীয় খাবার সেবন করার কারণে আপনি এক পর্যায়ে লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস ও পরবর্তীতে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই, লিভারের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে আপনার অবশ্যই উচিৎ হবে অ্যালকোহল মিশ্রিত খাদ্য অথবা পানীয় পরিহার করা।
প্যাকেট জাতীয় খাবার পরিহার
বাজারে যে সকল প্যাকেটজাত খাবার পাওয়া যায় তার সবগুলোতেই থাকে অত্যাধিক পরিমানে। আর এই প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাবার লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষকরে ডেলি মিট বা ফাস্ট ফুড সাধারণত উচ্চ পরিমাণে প্রিজারভেটিভ, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং কৃত্রিম সংযোজন থাকে। এই সমস্ত জিনিস শরীরে সঞ্চালিত বিষাক্ত পদার্থগুলিকে লিভারের এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
লিভারের সমস্যা দূরীকরণে করনীয় কি
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর মধ্যে লিভার প্রধান কার্যকারী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে থাকে। লিভার মূলত আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে নির্বাহ করে। মোটকথা হজম প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে আমাদের লিভারের স্বাস্থ্যের উপর যত্নবান হতে হয়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই যা খাচ্ছি তা অবশ্যই লিভারের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে। লিভার যদি সঠিকভাবে কাজ না করে বা লিভারের সমস্যা দেখা দিলে এ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেদিকে অবশ্যই সূক্ষ্ম ধারণা রাখতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আমাদের লিভারের কর্মক্ষমতাকে বাড়াতে সক্ষম।
১। প্রাকৃতিভাবে লিভারকে ভাল রাখতে হলে আপনি বেরি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। বেরি হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস যা লিভারের সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকরী। বাজারে আমরা সচরাচর বেরির মধ্যে ব্লুবেরি, রাস্পবেরি ও ক্র্যানবেরি পেয়ে থাকি। বেরি লিভারের প্রদাহ কমাতে ও লিভারের এনজাইমের কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করাসহ লিভারকে মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ মায়ের দুধ মহান আল্লাহর অপার নেয়ামত
২। লিভারের সমস্যা দূরীকরণে নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাবাস ও পরিমিত ঘুম খুবই দরকার হয়। যারা অনিয়মতান্রিকভাবে রাত জেগে থাকেন তাদের অধিকাংশই লিভারের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আবার যারা ধূমপান করেন, ধূমপানের যে নিকোটিন থাকে তা লিভারে যেয়ে লিভারের কোষকে দুর্বল করে। এর কারণে লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। লিভার ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, তবে কোমল পানি ও এলকোহলযুক্ত পানি পরিহার লিভার সমস্যা দূরীকরণে যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে।
লিভার পরিষ্কার রাখার কৌশল কি হতে পারে
অনিয়মতান্ত্রিক জীবন পরিচালনা, প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম, অপরিমিত শরীরচর্চার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার। অত্যধিক পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ, দীর্ঘদিন ধরে তৈলাক্ত খাবার বা তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার কারণে এক পর্যায়ে লিভারে চর্বি জমতে থাকে। আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক জীবন ধারণ ব্যবস্থায় শুধুমাত্র অনিয়মিত যত্রতত্র খাদ্য গ্রহণের কারণেই শরীরে দেখা দিতে পারে লিভার সংক্রমিত রোগ অথবা লিভার সিরোচিস রোগ, একপর্যায়ে মরণব্যাধি ক্যান্সার। আবার হটাৎ জন্ডিসে আক্রান্ত হলেও লিভার সংক্রমিত হতে পারে। আপনার জীবন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি কিছুটা নিয়মমাফিক চললেই লিভারের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। আমাদের শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজে অংশ নেওয়া নানা রকম উৎসেচক ক্ষরণ এবং উৎপাদনেও লিভারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু লিভারের ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেই স্বাভাবিক এই কাজগুলি ব্যাহত হয়।যার জন্য আপনাকে লিভার ভালো রাখতে হলে নিয়মিত এর দেখভাল করার পাশাপাশি লিভার পরিষ্কার রাখার কৌশল সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। কি খেলে লিভার পরিষ্কার হয় তা অনেকেই জানতে চান। তবে পাঁচ ধরণের খাবার নিয়মিত খেলে লিভার পরিষ্কার হয়, দূর হয় লিভারের সকল দূষিত পদার্থ। নিম্নে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
ক) হলুদ এর প্রয়োগ
হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান লিভারে জমা দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
খ) কাঁচা ও পেঁপে
কাঁচা পেঁপে হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বক ও হৃদরোগের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং বিশেষত মহিলাদের অনিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী; এতে ভিটামিন সি, এ, আঁশ ও এনজাইম (পাপাইন) প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
গ) গ্রিন টি
গ্রিন টি মূলত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদানে সমৃদ্ধ একপ্রকার চা, যা আমাদের শুধু লিভার নয় শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারে আসে। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন-চুল, ত্বক, শারীরবৃত্তীয় নানা কাজে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে।
ঘ) ওমেগা-৩ জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ তে যেপরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে তা আমাদের লিভার ভাল রাখতে যথেষ্ট। বিশেষকরে সামুদ্রিক মাছে এর পরিমাণ তুলনামুলকভাবে বেশী থাকে। তাছাড়া বাদামের মধ্যেও ওমেগা-৩ এর পরিমাণ অন্তর্নিহিত থাকে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সামুদ্রিক মাছে যে পরিমাণ ওমেগা-৩ এর পুষ্টি উপাদান থাকে তা মানবদেহের শরীর গঠনে পর্যাপ্ত। তাছাড়া, লিভারের উপকারের পাশাপাশি হার্ট ভালো রাখতেও ওমেগা-৩ এর সফলতা রয়েছে। আপনি চাইলে লিভারের জন্য টনিক হিসেবে ওমেগা-৩ জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করে দেখতে পারেন।
ঙ) শীতকালীন সবজি কপি
শীতকালীন সবজির মধ্যে বিশেষকরে ফুলকপি, বাঁধাকপি অথবা ব্রকলি জাতীয় সবজি লিভারের জন্য বেশ উপকারী। কপিতে গ্লুকোসিনোলেট্স নামক যে উপাদান থাকে তা লিভারের টক্সিন দূর করতে সহায়ক।
চ) ভিটামিন সি জাতীয় ফল
পেয়ারা, কমলালেবু, মুসাম্বি, বাতাবি বা সাধারণ পাতিলেবুও লিভারের যত্নে খাওয়া যায়। এই ধরনের ফলে ভিটামিন সি-র পরিমাণ বেশি। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
লিভার ভালো রাখতে কিছু ব্যায়াম
আধুনিক ব্যস্ততম জীবন ব্যবস্থায় কায়িক পরিশ্রমের অভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আপনার লিভার। পর্যাপ্ত শরীর চর্চায় গাফিলতির কারণে এক সময় দেখা দিতে পারে লিভার সঙ্ক্রমিত রোগ। এ থেকে পরিত্রানের জন্য জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি কয়েকটি শরীরচর্চা করলে লিভারের সমস্যা ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। নিম্নে লিভার ভালো রাখতে কিছু শারিরিক যোগ বিয়াম আপনার জন্য তুলে ধরা হল।
- শরীরচর্চাঃ নিয়মিত শরীরচর্চা করা স্বাস্থ্যকর টিপসের প্রধান ধরা হয়। আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে হলে অবশ্যই শরীরচর্চার বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা শরীরচর্চা আপনার জীবন ব্যবস্থাকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। ঘরে বা বাহিরে অথবা খেলার মাঠে প্রতিদিন ভোর বেলায় প্রাত্যহিক শারীরিক ব্যায়াম করে নিতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টার শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনার লিভারকে ভালো রাখতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে ।
- দ্রুতগতিতে হাঁটার অব্যাসঃ লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে দ্রুতগতিতে হাঁটার বিকল্প নেই। এই ধরনের হাঁটার ক্ষেত্রে খুব জোরে হাঁটলেও একসাথে দুই পা কখনই মাটি ছেড়ে যাবে না। অর্থাৎ এক পা মাটিতে টাচ না করা পর্যন্ত অন্য পায়ের আঙুল মাটি থেকে উঠাবেন না। একই সাথে হাঁটু মুড়াবেন না। এভাবে নিয়মিত হাঁটতে থাকলে দেখবেন আপনার দুই পায়ের নিচের পেশি যেমন ঠিকভাবে কাজ করছে তেমনি হার্ট সার্কুলেশনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার লিভারকে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চর্বিমুক্ত করতে সাহায্য করে।
- দৈহিক কসরতঃ যেসব দৈহিক কসরত আপনার শরীরের উপকারের পাশাপাশি লিভার ভাল রাখতে সহায়তা করে তার দিকেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। দৈহিক কসরতের মধ্যে বিশেষ করে ফ্রি হ্যান্ড জিম, বেলি জিম, পুশ-আপ দেয়া ইত্যাদি লিভারের জন্য ভালো। এ প্রকার শরীরচর্চা এক দিকে যেমন শরীরের পেশি গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক, তেমনি দ্রুতগতিতে ফ্যাটকে ভাঙতেও সাহায্য করে থাকে।
- লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পাইলেটসঃ লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে পাইলেটস করা যেতে পারে। বিশেষকরে পাইলেটস করার কারণে শরীরের নমনীয়তা ও পেশি শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে লিভারে রক্ত সঞ্চালন হওয়ার জন্য সহায়তা করে। ফলস্রুতিতে লিভার রক্ত দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি উন্নত রক্ত সঞ্চালন কাজে সাহায্য করবে। তাছাড়া পাইলেটস মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রেও বিশেষকরে উপযোগী। বিশেষকরে পাইলেটস পরোক্ষেভাবে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
- নিয়মমাফিক প্রাতভ্রমনঃ দৈনিক অথবা সপ্তাহে একদিন যদি আপনি প্রাতভ্রমন করতে পারেন এটি আপনার লিভারের জন্যও বিশেষভাবে উপকারি। ভোর বেলায় প্রাতভ্রমনের ক্ষেত্রে আপনি খালি পায়ে সবুজ ঘাসের উপর হাঁটাকে বেছে নিতে পারেন। তাছাড়া প্রকৃতির কোলে ভ্রমণ মনকে যেমন ভালো রাখে পাশাপাশি লিভারকেও ভালো রাখতে সহায়তা করে।
লিভার খারাপ হওয়ার কিছু কারণ
লিভার খারাপ হওয়ার কিছু কারণ বলতে গেলে অনেক কারণই রয়েছে।
- পুষ্টিকর খাবারের অভাবঃ পুষ্টিকর খাবারের অভাবেও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। দৈনিক সকাল বেলায় খাবার না খাওয়া, পামওয়েল, তেলে ভাজা খাবার, জাঙ্ক ফুড ও ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার লিভারের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
- অপরিমিত ঘুমঃ দীর্ঘসময় রাত জাগা ও অপরিমিত ঘুম লিভারের ক্ষতির অন্যতম কারণ। অপরিমিত ঘুমের কারণে শরীরে একধরনের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। যাঁর কারণে আমাদের শরীরের স্থূলতা থেকে শুরু করে, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগের ঝুঁকি ছাড়াও লিভার সংক্রান্ত জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার ও মদ্যপানঃ অস্বাস্থ্যকর খাবার অথবা দীর্ঘদিনের বাসী খাবার বা দুরগন্ধযুক্ত খাবার লিভারকে অসুস্থ করে তুলে। আবার অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের ক্ষতির জন্য একটা প্রধান কারণ। আবার মারিজুয়ানা, কোকেন–জাতীয় ড্রাগ লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে।
- যত্রতত্র ওষুধ সেবনঃ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত যত্রতত্র ওষুধ সেবনও লিভারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অপ্রয়োজনে যখন তখন ওষুধ খাওয়া অথবা অকারণে অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়াতেও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আবার দীর্ঘদিন যাবৎ এন্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার কারণে অথবা অত্যধিক ঘুমের ওষুধ সেবনের ফলেও লিভারের ক্ষতি কারণ।
- ধূমপানঃ ধূমপানের কারণে লিভারের ক্ষতি হয়। এটি সরাসরি লিভারের কোষ-কলার ক্ষতি সাধন করে থাকে।
- খাবারে কৃত্তিম প্রসাধনীর ব্যবহারঃ দৈনন্দিন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত মসলার ব্যবহার, চিনির বিকল্প হিসেবে কৃত্তিম সেগারিন ব্যবহার ছাড়াও কেমিক্যাল সমৃদ্ধ যেকোনো খাবারই আমাদের সাস্থের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ, প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার গ্রহণ ও খাবারে কৃত্তিম ফুড কালারের ব্যবহার থেকে আমাদের সর্বদাই সচেষ্ট থাকতে হবে।
লিভার সুস্থ আছে কিনা বুঝবেন কিভাবে?
লিভার সুস্থ রাখতে আমরা কত কিছুইনা করে থাকি। কিন্তু আপনার লিভার কতটুকু সুস্থ্য আছে সেটি বুঝবেন কিভাবে সেটি বুঝার জন্য চিকিৎসকের কিছু লক্ষণ রয়েছে। বিশেষ করে হটাৎ ক্লান্তি আশা,, পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া, চোখ ও ত্বকের বর্ণ হলুদ হয়ে যাওয়া এমনটি দেখতে পেলে বুঝতে হবে লিভারের কার্যকারিতায় অবশ্যই ব্যাঘাত ঘটছে। আপনার লিভার ফাংশন করার ক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্দকতা চোখে পরে তা নিম্নোক্তভাবে দেখানো হলঃ-
- আপনার শরীরে দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্তি অনুভব না হওয়া মানে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার লিভার সুস্থ্য ও স্বাভাবিক আছে।
- দৈনিক নিয়মিত প্রস্রাব ও মলত্যাগ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হলে অর্থাৎ পায়খানার রঙ স্বাভাবিক থাকা অথবা প্রস্রাবের গাঁয়ের রঙ গাঢ় প্রকৃতির না হলে ধরে লিতে হবে আপনার লিভার স্বাভাবিক রয়েছে।
- প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাই, সেটি যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হজম হয় তাহলে শরীরের সুস্থ্যতা অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। যদি পেট ফোলা বা ব্যথা অনুভব না হয় অথবা স্বাভাবিক মলত্যাগে বাঁধা সৃষ্টি না করে তাহলে বুঝবেন লিভার ভালো আছে।
- সাধারণত জন্ডিসে আক্রান্ত হলে শরীরের স্বাভাবিক রঙ ও চোখ অনেকটাই হলুদ হয়ে থাকে। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যতীত কোন অবস্থায় আপনার শরীরের কোন অংশ কোন কারণ ছাড়াই যদি হলুদ হয় তাহলে অবশ্যই ধরে নিতে হবে আপনার লিভারের কোন অংশ বা কোষগুলোতে আপ্যাক্টে হয়েছে। তাৎক্ষনাৎ দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন।
লিভারের সমস্যা দেখা দিলে কি কি লক্ষণ চোখে পড়ে
- প্রথমত আপনার লিভারের সমস্যা দেখা দিলে বুঝবেন আপনার শরীরের ত্বক ও চোখ অত্যধিক হলুদ হয়ে যাচ্ছে।
- দ্বিতীয়ত লিভার সমস্যার মুল কারণ হল, পেটের ডানপার্শে পেটে বা নিচে অত্যধিক ব্যাথা অনুভূত হওয়া, পেট ফাফা বা ফোলা পরিলক্ষিত হতে থাকে।
- দীর্ঘদিন যাবৎ শরীরে ক্লান্তি অথবা দুর্বলতা দেখা দেয়া।
- শরীরের নিচের অংশে অথবা পায়ের গোড়ালিতে ফোলা দেখা দেয়া।
- হটাৎ শরীরের চামড়ায় চুলকানি প্রদর্শিত হওয়া।
- বিশেষ করে ঘন ঘন বমির উপদ্রুপ হওয়া।
- পায়খানা অথবা প্রস্রাবের কালার হটাৎ পরিবর্তন যেমন-গাঢ় প্রস্রাব, ফ্যাকাশে বা আলকাতরার রঙের মতো পায়খানা হতে পারে।
সঠিক পরিচর্যার অভাবে লিভারের কি হতে পারে?
সঠিক পরিচর্যার অভাবে অথবা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে লিভারের কি কি ক্ষতি হতে পারে তা অনেকেরই অজানা থাকতে পারে। আপনি যদি লিভার সক্রান্ত জটিল রোগে ভোগেন তাহলে আর দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ সঠিক সময়ে সটিক পরিচর্যার অভাবেও আপনার জীবননাশের মতো পরিস্থিতে পড়তে হতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে অথবা সঠিক পরিচর্যার অভাবে লিভারের যা যা ক্ষতি হয় তা নিম্নোক্তভাবে তুলে ধরা হল-
- আপনার লিভার যখন প্রতিনিয়তই খারাপ হতে থাকে তখন মস্তিষ্কে একপ্রকার বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে যা একপর্যায়ে হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি সৃষ্টি করে, রক্তক্ষরণ সমস্যা দেখা দেয়, কিডনি বিকলের মতো পরিস্থিতি, ভয়ানক লিভার সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার মতো জটিলতা তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত পরিণতি হয় ভয়াবহ মৃত্যু।
- অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণও লিভারের ক্ষতির অন্যতম কারণ। যখন লিভার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রোটিন তৈরি করতে পারে না, লিভারের কার্যকারিতা হাঁড়াতে বসে তখন সামান্য পরিমাণে আঘাত প্রাপ্ত হলেও বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হলেও তা সহসায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে থাকে।
- আপনার লিভার খারাপের দিকে যেতে থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকসময় কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
- যখন লিভার খারাপ পর্যায়ে যেতে শুরু করে তখন শরীরের ইমিনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। রক্ত, মূত্রনালী বা শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা
লিভার আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অমুল্য সম্পদ। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি ভালো রাখতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু টিপস মনে রাখতে হবে। প্রিয় পাঠক, আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং লিভার সুস্থ রাখার টিপস, সঠিক পরিচর্যার অভাবে কি হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি আপনার লিভার ভালো রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। ভবিষ্যতে, এমন আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বেশী বেশী করে ফলো করার অনুরোধ জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিলাম, ধন্যবাদ।



আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url